পাবনায় নদী বাঁচাতে স্বেচ্ছাশ্রমের ডাক

“নিয়েছি শপথ গড়বো দেশ, পরিস্কার রাখবো বাংলাদেশ” এই শ্লোগানে পাবনায় স্বেচ্ছাশ্রমে নদী দূষণ মুক্ত করতে মাঠে নেমেছেন স্থানীয়রা। জেলার সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া কাকেশ্বরী নদীতে পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতার অংশ হিসেবে এ কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। নদীর দখল দূষণ রোধে স্থানীয় এই উদ্যোগ হতে পারে উদারহণ বলছেন জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবিদরা।
স্থানীয়রা জানান, পাবনার বেড়া সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের কাকেশ^রী নদী। এক সময়ের স্রোতস্বিনী এই নদী ক্রমাগত দখল দূষণে এখন মৃতপ্রায়। প্রতি বছর বর্ষায় কিছুটা পানি থাকলেও, পানি নেমে যাওয়ার পর জমে থাকা পানিতে কচুরিপানা পঁচে দূষিত হয়ে পড়ে নদী ও আশেপাশের পরিবেশ। নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় নদীর তীরের বাসিন্দারা। চাষাবাদ বা মাছ উৎপাদন কোন কাজেই আসছে না ঐতিহ্যবাহী কাকেশ^রী নদী।
কাকেশ^রীকে দূষণমুক্ত করতে সরকারের বরাদ্দের আশায় না থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় ‘পুন্ডুরিয়া শান্তি সংঘ’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমে গ্রামের সব বয়সের মানুষ হাতে হাত রেখে নেমেছেন কচুরীপানা ও ময়লা পরিষ্কারের কাজে।
যুব সমাজের এমন উদ্যোগ দারুণ সাড়া ফেলেছে গ্রামের মানুষের মাঝে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
সংগঠনটির ডাকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কচুরিপানা অপসারণে ঝাঁপিয়ে পড়েন পুন্ডুরিয়া গ্রামের ছাত্র-শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের প্রায় ২০০ মানুষ। কচুরিপানা পরিষ্কারের সামাজিক আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন সময় উপস্থিত হয়েছেন করমজা ইউপ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী বাগচী, ডে গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ এম এ ওহাব বাগচী, সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন, সমাজসেবক মনসুর হোসেন, করমজা ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. ফারুক হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য রজব আলী মুন্সীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ডে গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ এম এ ওহাব বাগচী জানান, পুন্ডুরিয়া কাকেশ্বরী নদীর দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যেভাবে কচুরিপানা আটকে ছিল তা এলাকাবাসীর জন্য দুর্যোগে পরিণত হয়েছিল। তাই দল-মত-নির্বিশেষে স্বেচ্ছাশ্রমে সবাই একযোগে কচুরিপানা অপসারণে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। পরে আর যাতে কচুরিপানা জমতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। প্রতিটি ভালো কাজের সঙ্গে থেকে আমি আছি সব সময় থাকব।
সংগঠনটির পরিচালক জহুরুল ইসলাম পাপ্পি জানান, আমরা অতীতে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছি তাই পরিবেশ ও সচেতনতার অংশ হিসেবে আমরা আমাদের গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কাকেশ্বরী নদীতে সাত দিনব্যাপী কচুরিপানা পরিষ্কারের কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছি। নদীর দুইপাড়ে প্রায় ১২ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস দরিদ্র অধিকাংশ মানুষ নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া দৈনন্দিন কাজে এই নদীর পানি ব্যবহার করে থাকি। এখন থেকেই যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে অন্য সব নদীর মতোই এই নদীও হারিয়ে যাবে, যা আমরা চাই না। আমরা পুন্ডুরিয়া শান্তি সংঘ এই নদীর পরিবেশ রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
করমজা ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন আলী বাগচী বলেন, নদী পরিষ্কার একটি ব্যয়বহুল কাজ। ইউনিয়ন পরিষদ বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করলেও বরাদ্দ পাওয়া কঠিন ও সময় সাপেক্ষ ব্যপার। তবে এলাকার তরুণ প্রজন্ম যেভাবে মাঠে নেমেছে তাতে কঠিন কাজ খুব সহজেই বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। প্রতিটি এলাকার মানুষ নিজ উদ্যোগে সচেতন হলে, দেশের নদীগুলো বাঁচানো সম্ভব হবে। কাকেশ^রী দূষণমূক্ত হলে দৃষ্টান্তই সৃষ্টি হবে।
প্রাথমিকভাবে করমজা ইউনিয়নে কাকেশ^রী নদীর ২ কিলোমিটার এলাকায় কচুরিপানা ময়লা অপসারণের লক্ষ্য পুন্ডুরিয়া শান্তি সংঘের। পর্র্যায়ক্রমে পরিসর বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির।