খালাতো ভাই কোটায় এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকাশ!

নিয়মিত ছাত্র নন, কলেজ ক্যৃাম্পাসে কোন রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় না থেকেও ঐতিহ্যবাহী পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আরাফাত ইসলাম আকাশ। অভিযোগ উঠেছে, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর রাব্বিউল ইসলাম সীমান্তের আপন খালাতো ভাই হওয়ায় গঠনতন্ত্র অমান্য করে আকাশকে সাধারণ সম্পাদক করেছে জেলা ছাত্রলীগ। এ নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজ ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গত ০৯ মার্চ সম্মেলন ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা ছাত্রলীগ। ঐ কমিটিতে জুবায়ের বিশ^াস অন্তু ও আরাফাত ইসলাম আকাশকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ। কমিটিতে সভাপতি জুবায়ের বিশ্বাস অন্তুসহ অধিকাংশ নেতাকর্মী এডওয়ার্ড কলেজসহ বিভিন্ন ইউনিটে ছাত্রলীগের পদে দায়িত্ব পালন করলেও, আরাফাত ইসলাম আকাশ কখনোই ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। বরং জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানসহ বিএনপি নেতাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার ছবি সামাজিক মাধ্যমে আছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সীমান্ত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরেই আরাফাত তার সাথে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আসা যাওয়া শুরু করে। আত্মীয়তার সম্পর্কের জোরেই আকাশকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আরাফাত ইসলাম আকাশ ঢাকার বেসরকারী ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেন। ২০২৩ সালেই ডিসেম্বর মাসে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ডিগ্রী প্রাইভেট কোর্সে ভর্তি হন। এবং গত ০৯ মার্চ গঠিত কমিটিতে তাকে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়।
তবে, প্রাইভেট ডিগ্রী কোর্সের শিক্ষার্থীরা কলেজের নিয়মিত ছাত্র নয় বলে নিশ্চিত করেছেন সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুব সরফরাজ। তিনি বলেন, প্রাইভেট কোর্সের শিক্ষার্থীরা কলেজের নিয়মিত বা অনিয়মিত কোন ক্যাটগরিতেই পড়েন না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ক্যাটাগরি। তারা কলেজের নিয়মিত সুযোগ সুবিধা পাবেন না। কলেজের সহশিক্ষা কার্যক্রম খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার অধিকারও তাদের নেই। কলেজের পরিচয় ব্যবহার করে সরকারি সুবিধাদি পাওয়ারও তাদের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসেন বলেন, আরাফাত ইসলাম আকাশকে আমরা চিনি না। ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতেও তাকে কখনো দেখিনি। উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো প্রাইভেট ডিগ্রীতে ভর্তি হয়েই সে কলেজ ছাত্রলীগ নেতা বনে গেলো। কলেজের অনেক শিক্ষার্থীই দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদের বাদ রেখে কে কেনো এধরণের একটি অভিজ্ঞতাশূন্য ছেলেকে এরকম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসালো সেটি একটি প্রশ্ন। নেতৃত্বে যোগ্যদেরই নির্বাচন করা উচিত।
পাবনা জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সাবেক ভিপি এড. আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রই নয় তাকে ওই ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো নিয়মতান্ত্রিক কোনো প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে না। যদি বিষয়টি সত্য হয়, তবে নিঃসন্দেহে এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও গৌরব ক্ষুণ্ন হবে বলে আমি মনে করি। আশা করি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরাফাত ইসলাম আকাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে কলেজের পাস কোর্সের ছাত্র দাবী করেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে আমি দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত। অতীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়লেও বর্তমানে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ডিগ্রিতে পড়াশোনা করছি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অবগত। এগুলো সমাধান হয়ে গেছে।
ছাত্রদলের সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে আকাশ বলেন, যাদের সাথে ছবি তোলা নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তারা আমার স্কুলের বড়ভাই। স্কুলের রিইউনিয়নে অনেকের সাথে ছবিটি তোলা। ওইসময় ওই বড়ভাইয়েরা কে কোন দলের কোন পদে ছিলো সেটাও আমার জানা ছিলো না। ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার প্রশ্নই ওঠেনা।
এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর রাব্বিউল ইসলাম সীমান্তকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, কমিটি গঠনের সময় আকাশ নিজেকে কলেজের নিয়মিত ছাত্র বলেই জানিয়েছে। তথ্য গোপন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সাঈদ কনক বলেন, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে গঠনতন্ত্রে নিয়মিত ছাত্রত্বের বিধান রয়েছে। এডওয়ার্ড কলেজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা কাম্য নয়। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কেন্দ্রীয় সভাপতি সম্পাদকের পরামর্শ নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। গঠনতন্ত্র অমান্য করে স্বজনপ্রীতির প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।