ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে নববধূ অপরহণ মামলা, ১৭ দিন পর উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুল হাসান বিপ্লবের বিরুদ্ধে বিবাহিত এক নারীকে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার ১৭ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে পুলিশ ঐ নারীকে উদ্ধার করলেও এখনো অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সভাপতিকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ জানিয়েছে পরিবার। বুধবার উদ্ধার হওয়া নারীকে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ।
পরিবার সূত্র জানায়, অভিযুক্ত আতিকুল হাসান বিপ্লব ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ভাঙ্গুড়ার রাঙালিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় সম্প্রতি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর মা।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী ভাঙ্গুড়া হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করতেন। কলেজে আশা যাওয়ার পথে দীর্ঘদিন ধরে আতিকুল হাসান বিপ্লব কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। মেয়েটি বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানালে পরবর্তীতে আরও বেশি উত্ত্যক্ত করতেন বিপ্লব। এক পর্যায়ে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেন বাবা-মা। বিয়ের পরে গত ৩১ মার্চ তারা বাড়িতে বেড়াতে আসলে বিপ্লব একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার না পেয়ে গত ৮ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর মা রেখা পারভিন। মঙ্গলবার রাতে ঐ নারীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ভুক্তভোগীর বড় বোন জুলেখা পারভিন অন্তরা বলেন, পুলিশ প্রথম থেকেই অপহরণের ঘটনায় পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু বিপ্লব ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। পরে আমরা আদালতে গিয়েছি। আদালতের কপি থানায় দিলেও পুলিশ গাফিলতি করেছে। উদ্ধারের পর বোনের সাথে দেখা করতে চাইলেও পুলিশ আমাদের দেখা করতে দেয়নি। এই ১৭ দিন ধরে আমার বোন কোথায় ছিলো? তাকে ভয় দেখিয়ে স্বীকোরোক্তি নেয়া হচ্ছে।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, পুলিশের এ ঘটনায় কোনই গাফিলতি নেই। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। ভিকটিমকে উদ্ধারের পর, তিনি স্বেচ্ছায় গিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে, আদালতে তিনি যে জবানবন্দী দেবেন তার ভিত্তিতেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো। অভিযুক্ত বিপ্লবকে আটকেও অভিযান চলছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বিপ্লবের মুঠোফোনে কল করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মামলা দায়েরের পর জেলা ছাত্রলীগ বিপ্লবকে কারণ দর্শানো নোটিস ছাড়া তেমন কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি। এতে পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রনেতা জানান, এ নারীর সাথে গত কয়েক মাস ধরে বিপ্লব প্রকাশ্যে নানা বিতর্কিত কাজে জড়িয়েছে। পরিবার থেকে বিয়ে দিতে চাইলে সে রাজি হয়নি। পরে, অন্যত্র বিয়ে হওয়ার পরেও মেয়েটিকে নানাভাবে উত্যক্ত করেছে। গত ৩১ মার্চ থেকে মেয়েটি অপহরণের ঘটনায় বিপ্লবের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। এতবড় ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলেও জেলা ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করেনি। ছাত্রলীগ সভাপতি হওয়ায় পুলিশও তাকে গ্রেফতার করেনি।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। বিপ্লবের কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আমরা বিষয়টি জানার সাথে সাথেই গত ১২ এপ্রিল বিপ্লবকে শোকজ করা হয়েছে। তাকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও,এখনো জবাব পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় সংসদকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।