মাঠ জুড়ে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪শ’ হেক্টর বেশি চাষ

মামুন হোসেন: শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। প্রকৃতি সেজেছে যেন এক হলুদ বর্ণের অপরুপ সাজে। শীতের সোনাঝরা রোদে মাঠ জুড়ে যেন ঝিকিমিকি করছে সষিার হলুদ ফুল। এ বিলের দিগন্তজুড়ে এখন হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে। দেশে ভোজ্যতেলের উর্ধ্বগতি, সয়াবিন তেল নিয়ে চলে তেলেসমাতি। তাই স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকছে চলনবিলের কৃষক।

সরেজমিনে দেখা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া, ছাইকোলা, বিলচলন, হরিপুরসহ উপজেলার মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। দু’চোখ যেদিকে যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। চাটমোহরের মাঠে প্রকৃতি যেন সেজেছে আপন রুপে। এমন নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের দৃশ্য, ফুলের গন্ধ, পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে। দিগন্তজুড়ে হলুদ সরিষা ফুলে কৃষক যেন এক নতুন স্বপ্ন বুনছে। এখন সরিষা গাছে ধরেছে ফুল, আর কিছুদিন পরেই আসবে ফল। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেলে সরিয়ায় ভাল ফলনের আশা করছেন কৃষক। বিগত বছরের চেয়ে তুলনামূলক এ বছর সরিষার আবাদ অনেক ভাল হয়েছে। তাছাড়া সময়মতো সার-কীটনাশক ব্যবহারের কারণে সরিষার আবাদ করতে এবার কৃষককে কোন প্রকার বেগ পেতে হয়নি।

কথা হয় চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পাকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের সাথে তিনি বলেন, বিল থেকে দ্রæত পানি নেমে যাওয়ায় ও আবহাওয়া ভালো থাকায় আমি ৫ বিঘা সরিষার আবাদ করেছি। অনেক সুন্দর আবাদ হয়েছে, ভালো ফলনও হবে বলে আশা করছি। নিমাইচড়ার সমাজ গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান জানান, এ বছর তিনি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে, ভাল দাম পেলে লাভের মুখ দেখবেন তিনি। উপজেলার দরাপপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম সেও ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন, তারা বলেন সরিষা চাষ এখন লাভজনক হওয়ায় এলাকায় দিন দিন সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষকেরা জানান, আবহাওয়া ভাল থাকলে প্রতি বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ হারে সরিষা ঘরে তুলতে পারবে। এ বছরের মতো আগামীতে ভালো দাম পাবে বলে আশা করছে তারা। এবার এ অঞ্চলে উন্নত ফলনশীল জাতের বারী-৯,১১,১৪,১৫,১৭,১৮, বিনা- ৪, টরি-৭ জাতের সরিষার চাষ সহ স্থানীয় জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। এবিষয়ে চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ জানান, উপজেলায় কয়েক দফা বন্যার পানি এলেও দ্রুত মাঠ থেকে পানি নেমে যায়। এ জন্য মাঠের মধ্যে জলাবদ্ধতা না থাকার কারনে অনেকেই সরিষা বীজ ফেলেছে সুবিধাজনকভাবে। তাই, এ বছর সরিষা আবাদ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। উপজেলায় এ বছর ৮ হাজার ১শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।

গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৬ হাজার ৭শ’ ৫০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১ হাজার ৪শ’ হেক্টর সরিষা চাষ বেশি হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে উপজেলার ৪ হাজার ৫শ’ কৃষককে সরিষা বীজ ও সার বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। সরিষা চাষের পদ্ধতি ও পোকার আক্রমণ হলে কি করণীয় সে বিষয়ে কৃষককে সচেতন করেছেন।