ভালো নেই প্রতিমা শিল্পীরা

রেজা নাবিল: পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মিঠুন পাল। ১৬ বছর ধরে করেন প্রতিমা তৈরির কাজ। বাবার থেকেই এই প্রতিমা তৈরির কাজে হাতেখড়ি তার। এবারের দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে পাবনার ৭টি মন্দিরে ৮টি প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তার ৬ সদস্যের শিল্পী দল। খড় ও কাদামাটিসহ নানা উপাদানে প্রতিমাকে পূর্ণরুপ দিতে সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করছে তারা। কেউ করছেন কাদামাটি প্রস্তুত, কেউ করছেন প্রতিমার নকশা আবার কেউ-বা করছেন প্রতিমার শেষ মুহুর্তের কাজ। দেখে মনে হবে ব্যাপক উৎফুল্লতার সাথে মনের মাধুরি মিশিয়ে প্রতিমা তৈরি করছেন তারা। এ উৎফুল্লতার মাঝেও রয়েছে নীল বেদনার সম্ভার। দিন বদলেছে, বদলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর। কিন্তু বদলায়নি তাদের দু:খ ও কষ্টের রঙ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামসহ বেড়েছে প্রতিমা তৈরির খরচ, কিন্তু বাড়েনি তাদের মজুরি। সেই মান্ধাতা আমলের মজুরিতেই এ কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এতে দুর্মূল্যের এই বাজারে তাদের কষ্ট বেড়েই চলেছে।

প্রতিমা শিল্পীরা জানান, এ শিল্পের এখন আর তেমন কদর নেই। তাই বাধ্য হয়ে তাদের অধিকাংশই পেশা বদলেছে। কেউ করেন খেতখামারে মজুরের কাজ, কেউ-বা করেন রাজমিস্ত্রীর কাজ। দুর্গাপূজার সময় কিছু পেশায় ঢাল সিজন হওয়ায় কিছু লোক আসেন এ প্রতিমা তৈরির কাজে। মাসখানেক এই কাজ করে আবার ফিরে যান নিয়মিত পেশায়। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে এসময় চলা কষ্টকর। এব্যাপারে প্রতিমা শিল্পী মিঠুন পাল জানান, ৩/৪ জন মিলে কাজ করলে একটা প্রতিমা বানাতে ৬/৭ দিন লেগে যায়। ৫০ হাজার টাকা চুক্তির একটি প্রতিমা তৈরিতে খরচই হয় ৩০ হাজার টাকার মত। সে হিসেবে দিনরাত কাজ করে হাজিরা আসে ৫শ টাকার মত। জিনিসের যে দাম, এই আয়ে সংসার চালানো সম্ভব না।

তিনি আরো জানান, দুর্গাপূজায় সবমিলিয়ে ৩/৪ লাখ টাকার প্রতিমা বানান তারা। খরচ বাদে এতে তাদের আয় থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মত। এ দিয়ে কিছুই হয় না। শুনেছিলাম সরকার মৃৎশিল্পীদের জন্য এর আগে কি সব (প্রণোদনা) দিলো , আমরা এগুলোর কিছুরই মুখ দেখতে পাইনি। সবমিলিয়ে আমরা ভালো নেই।

এদিকে আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দুধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। গত ১৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে মর্ত্যে মায়ের আগমনী বার্তা পৌঁছে গেছে এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। এতে পাবনা পৌর এলাকার ৩৪ টি সহ জেলার মোট ৩৬০ মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে বিচিত্র রঙের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে প্রতিমা রঙের কাজ।

এব্যাপারে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রভাস কুমার ভদ্র বলেন, প্রায় প্রতিটি মণ্ডপেরই প্রতিমা নির্মাণ প্রায় শেষ, এখন রঙের কাজ শুরু হয়েছে। সুশৃঙ্খলভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে সবধরণের প্রস্তুতিই আমাদের রয়েছে। পূজা শুরুর আগে পর্যন্ত নিজেদের প্রতিমা ও এ সংশ্লিষ্ট সকল কিছু দেখভাল করা সহ প্রতিটি মণ্ডপে কেন্দ্র নির্ধারিত ২৫টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে উৎসবমূখর পরিবেশই বিরাজ করবে মণ্ডপগুলোতে। অন্যদিকে এ পূজাকে ঘিরে পাবনায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন।

এব্যাপারে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম জানান, মণ্ডপ এলাকাগুলোতে বিভিন্ন সময় পুলিশি টহল চালানো হচ্ছে এবং গোয়ান্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। পূজা শুরুর দিন থেকে মণ্ডপগুলোকে প্রশাসনিক কড়া নিরাপত্তা বলয়ে আনা হবে। এছাড়া এখনও আমরা পূজা উযাপন কমিটির সাথে যোগাযোগ রাখছি, কোনো অসুবিধা হয় কি না জানার চেষ্টা করছি। আশা রাখছি কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই পাঁচদিনব্যাপী এ উৎসব সম্পন্ন হবে।