চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমে ইতিহাস গড়ল ভারত

চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে প্রথম কোনও দেশ হিসেবে পা রাখলো ভারত। বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬ টায় দেশটির চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ করতে শুরু করে। পরে ৬টা ৪মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করে ইতিহাস গড়ে চন্দ্রযান-৩। পৃথিবীর আর কোনও দেশ সেখানে এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে ভারতীয়দের পাখির চোখ ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের সেই অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে।

দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরোর ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে অবতরণের দৃশ্য। দেশটির লাখো মানুষ সাক্ষী হন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের। ভারত ইতিহাস গড়ার সাথে সাথে বেঙ্গালুরুতে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর কন্ট্রোল রুমে তুমুল করতালিতে মেতে ওঠেন বিজ্ঞানীরা। ইউটিউবে ইসরোর সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটি স্পর্শ করার সাথে সাথে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতীয় পতাকা উড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান দেশবাসীকে।

ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম চন্দ্রপৃষ্ঠে নেমেছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করে ইতিহাস গড়েছে ভারত। ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ অবতরণ শুরু করেছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর গতিপথ ধরে নামছে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। বিক্রমের অবতরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইসরোর কমান্ড কক্ষে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন বিজ্ঞানীরা। তবে তাদের মাঝে ব্যাপক উৎকণ্ঠাও দেখা গেছে।

ভারতের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, চন্দ্রযান-৩ থেকে শিগগির চাঁদের পৃষ্ঠে একটি রোভার নামানো সম্ভব হবে এবং সেটি পৃথিবীতে ছবি ও ভিডিও পাঠাতে পারবে।

এদিকে, চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ইসরোর কর্মকর্তারা। চন্দ্রজয়ের সাফল্যে উদ্বেলিত ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, ভারত চাঁদে পৌঁছেছে। সফট ল্যান্ডিং করতে পেরেছি আমরা। এদিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শেষ ১৫ মিনিটের যাত্রা। প্রথমে চাঁদের ওপর ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয় ল্যান্ডার বিক্রমকে। অবতরণ স্থল থেকে তার দূরত্ব ছিল ৭৪৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে চাঁদের দিকে নেমে আসার প্রক্রিয়ায় ল্যান্ডারের গতিবেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। এরপর গতি কমিয়ে আনা হয়। ৬৯০ সেকেন্ড এভাবে ধীরে ধীরে নামার পর ল্যান্ডারের ইঞ্জিনগুলো কাজ করা শুরু করে। দ্বিতীয় চন্দ্রযানে পাঁচটি ইঞ্জিন ছিল। তৃতীয় চন্দ্রযানে ইঞ্জিনের সংখ্যা কমিয়ে চার করা হয়েছে। সফট ল্যান্ডিংয়ের সময় দু’টি ইঞ্জিন চালু রাখা হয়। দ্বিতীয় চন্দ্রযানে যে সেন্ট্রাল ইঞ্জিন ছিল এবার সেটিও বাদ দেওয়া হয়েছে। ল্যান্ডিংয়ের সময় গতিবেগে গণ্ডগোল হলে বা সেন্সর কাজ না করলে যেন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, সেজন্য সফটওয়্যার আরও উন্নত করা হয়।

ল্যান্ডার বিক্রমের চূড়ান্ত পর্যায়ের এই অবতরণ প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে মোট ১৯ মিনিট। তারপরই তৈরি হবে এক নতুন ইতিহাস। চাঁদে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করানো দেশের তালিকায় চতুর্থ হিসেবে নাম লেখাবে ভারত। এর মধ্য দিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরু আবিষ্কারের কৃতিত্বও গড়বে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরো। এর আগে এই ইতিহাস গড়েছে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন।

ভারতের চন্দ্রাভিযান সফল হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টার দিকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইভ বক্তব্যে মোদি বলেন, ভারত আজ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেস বার্গ থেকে দেওয়া লাইভ বক্তব্যে মোদি বলেন, ‘ ভারত এখন চাঁদে। আজ ভারতের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। আজকের এই দিনটি ভারতের ইতিহাস চিরদিন মনে রাখবে, এবং আমাদেরকে এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করবে।’ ভারত এর আগেও ২ বার চন্দ্রাভিযানের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু ব্যার্থ হয়েছিল সেসব অভিযান। চন্দ্রযান ৩ চাঁদের অভিমুখে ভারতের তৃতীয় অভিযান এবং এটি সফল। নিজ বক্তব্যে মোদি বলেন, ‘এই অভিযান প্রমাণ করেছে— অতীতের ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া হলে তা সাফল্য এনে দেয়।’