প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন, সম্পত্তির অধিকার বঞ্চিত পাবনার ঐতিহ্যবাহী বাংলা বিড়ির প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস সরকারের স্ত্রী সন্তান

বিশেষ প্রতিনিধি
জামায়াতের সাংগঠনিক কাজে অর্থায়নে বাধা দেয়ায় পাবনার ঐতিহ্যবাহী শিল্প পরিবার বাংলা বিড়ির সম্পত্তি থেকে ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে জোরপূর্বক সম্পত্তি ও ব্যবসা দখলের অভিযোগ উঠেছে। কোন ধরণের আইনগত প্রক্রিয়া বা নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক আর্থিক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মৃত ইউনুস আলী সরকারের মৃত বড়ছেলে রেজাউল করিমের স্ত্রী মিরা করিম ও ছেলে মিরাজুল সরকার। সম্পত্তির অধিকার ও ব্যবসার অংশীদারিত্বের অধিকার আদায়ে প্রশাসনসহ নানা মহলে বারংবার ধর্ণা দিয়েও কোনই প্রতিকার পাননি দাবী ভুক্তভোগী ওয়ারিশদের। সম্প্রতি, এ বিষয়ে ন্যায় বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদনও করেছেন মৃত ইউনুস সরকারের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত স্ত্রী, সন্তানেরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পাবনার স্বনামখ্যাত ব্যবসায়ী মৃত ইউনুস আলী সরকার ১৯৮০ র দশকে শহরের শালগাড়ীয়া এলাকায় বাংলা বিড়ি নামে বিড়ি ব্যবসা শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম ও ব্যবসায়িক দক্ষতায় অল্প দিনেই বাংলা বিড়ি সমগ্র উত্তরবঙ্গে বাজারে ব্যবসায়িক সাফল্য পায়। ফলে, বাংলা বিড়ি পাবনার মানুষের কর্মসংস্থান ও সরকারের রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।
২০০৬ সালে ইউনুস আলী সরকার স্ত্রী ও নাবালক সন্তানদের রেখে মারা যান। এরপর পরিবারের সদস্যরা ইউনুস আলী সরকারের বড় ছেলে রেজাউল করিম আর্থিক হিসাব ও ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব ও ক্ষমতা প্রদান করে। রেজাউল করিম পরিবারের সদস্য ও ওয়ারিশদের ভরণপোষণ ও আর্থিক সকল বিষয় দেখভাল করতেন। কিন্তু ২০২২ সালে ২৩ আগস্ট রেজাউল করিম মারা গেলে, তার স্ত্রী মিরা করিম ও পুত্র মিরাজ সরকার কোন ধরণের আলাপ আলোচনা ও আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই ব্যবসা ও সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নেন। ইউনুস সরকারের অন্য সন্তানেরা সাবালক হওয়া সত্ত্বেও তাদের ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নানা অজুহাতে সম্পত্তি বন্টন না করে ভয়ভীতি দেখান।
একই সাথে, ওয়ারিশদের আপত্তি উপেক্ষা করে জামায়াত রোকন মিরা করিম ও তার পুত্র মিরাজ গোপনে জামায়াতের সাংগঠনিক কাজে অর্থ প্রদান করতে থাকেন। ইউনুস সরকারের সন্তানেরা এর প্রতিবাদ জানালে উত্তারিধাকারিদের ন্যায্য হিস্যা ও ভোগ দখলের অধিকার বঞ্চিত করতে গুন্ডা বাহিনী দিয়ে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ইউনুস সরকারের ছেলে ইউসুফ সরকার বলেন, আমার বাবা মারা গেলে বড় ভাই ব্যবসার দায়িত্ব নেন। তখন আমাদের মা রাশেদা খাতুন, ভাই ইসমাইল সরকার, বোন আজেদা খাতুন, মুনি খাতুন, লাকি খাতুন, ইসমত আরা আঁখি, সুরাইয়া সুলতানা রাখি ও জান্নাতুল ফেরদৌসের অভিভাবকের দায়িত্বও তিনি পালন করতেন। কিন্তু ভাইয়ের মৃত্যুর পর ভাবি মিরা করিম কৌশলে সব সম্পত্তির দখল নেন। আমরা সাবালক হওয়া সত্ত্বেও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। একপর্যায়ে জামায়াতের কার্যক্রমে আমার বাবার ব্যবসার টাকা দিতে শুরু করলে আমরা প্রতিবাদ জানাই। তখন আমাদের বাড়ি থেকেও উচ্ছেদে গুন্ডা বাহিনী দিয়ে অত্যাচার শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রশাসনকেও ভুল বুঝিয়ে আমাদের হয়রানি করেন। আমরা এর প্রতিকার চেয়ে জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের কাছেই সাহায্য চেয়েও কোন সমাধান পাই নি। উল্টো মিরাজ ও তার মা মিলে ব্যবসায় অবৈধ কার্যক্রম ও নকল ব্যান্ড রোল লাগিয়ে আমাদের সবাইকে মামলার আসামি বানিয়েছে। আমরা দুই ভাই এখন দিশেহারা। এই অন্যায়ের বিচার চাই।
ইউনুস সরকারের মেয়ে নাজমা খাতুন বলেন, আমাদের ভাবী মিরা করিম বাড়িতে এবং বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সাংগঠনিক কাজ করেন। আমাদেরকেও জামায়াতের গোপন কাজে যোগ দিতে চাপ দেন। আমরা তাতে রাজি না হওয়ায়, আমাদের বাবার সম্পত্তির ভোগ দখল থেকে বঞ্চিত করছেন। আমাদের বাড়ি, কারখানা সমুদয় সম্পত্তি তারা জোর করে দখল করে নিয়েছেন। আমাদের পিতার এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা এখন পথের ফকির। কোটিপতির স্ত্রী আমাদের মায়ের ওষুধ কেনার টাকাও এখন নেই।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত মিরা করিমকে বার বার ফোন দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। মিরা করিমের ছেলে মেরাজ সরকারকে ফোন দিলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে মালিক দাবি করেন। তিনি বলেন, ব্যবসার লাইসেন্স এখন বাবার নামে। তিনি কিভাবে মালিক হয়েছেন তা আমার জানা নেই। যেহেতু মালিক আমার বাবা তাই তাদের এখানে তাদের পাওনা দাবির আইনগত ভিত্তি নেই। আর জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে, আইনগতভাবেই আমরা এর মোকাবেলা করবো।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, বাংলা বিড়ির প্রতিষ্ঠাতা মৃত ইউনুস আলীর সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। আমরা উভয়পক্ষ থেকেই বিভিন্ন সময় অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সমাধান করতে দু’পক্ষের আইনজীবীসহ একাধিক বার সালিশ বৈঠকেও তারা ঐক্যমতে আসেন নি। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।