নিজস্ব প্রতিনিধি:
চার মেডিকেল শিক্ষার্থীর পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়া সহ ৫৮২ জন অসহায় ও দুস্থের পাশে দাঁড়িয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসন। এক্ষেত্রে তাদের প্রায় ৩৭ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সরাসরি এধরণের সহায়তা কার্যক্রমে ব্যাপক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সহায়তাভোগী ও সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসন জানায়, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে চারজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর পূর্ণ টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ভার নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া মেধাবী ছাত্রী মেঘলা খাতুনকে আগামী পাঁচ বছরে মোট তিন লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান। টিউশন ফি হোস্টেল ভাড়া, খাবার, বই-পত্র, পরীক্ষার ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পাঁচ বছরব্যাপী এই সহায়তা পাবেন এই শিক্ষার্থী। একাডেমিক বছর অনুযায়ী ধাপে ধাপে এ সহায়তা দেয়া হবে। শুধু মেঘলার ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে অক্ষম ও অন্যান্য সংকট নিরসনে জেলার ৫৮২ জন দরিদ্র ও অসহায়কে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। গত ৮ থেকে ৯ মাস ধরে এ এসব সহায়তা দেয়া হয়েছে। এধরণের সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানায় জেলা প্রশাসন।
এব্যাপারে সহায়তাভোগী মেডিকেল শিক্ষার্থী মেঘলা খাতুন বলেন, মেডিকেলে চান্স পেয়েও সবশেষ পড়তে পারবো কি না, এ নিয়ে একদম অনিশ্চয়তাতায় ছিলাম। অনেকেই চান্স পেয়েই ভর্তি হচ্ছেন, কিন্তু তখনো আমার চারিদিক অন্ধকার। এরপর জেলা প্রশাসক ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে ডেকে ভর্তির জন্য সহযোগিতা করলেন। একইসাথে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলেন। এরকমভাবে দেশের সকল প্রশাসনিক কাঠামো যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে প্রশাসন আস্থার প্রতীক হবে।
আর্থিক সহায়তাভোগী কয়েকজন জানান, হুট করে অভাব অনটনে পড়ে অনেক সময় কেউ কেউ চিকিৎসাটুকুও করাতে পারেন না। আবার কয়েকজন কন্যাদায়ে পড়েন। অর্থাৎ মেয়ে বিবাহ দিতে গিয়ে সবশেষে পেরে ওঠে না, অনেক সময় বিয়ে দিয়ে মেয়ে আনার মত সামর্থ্যও রাখেন না। এরকম আকস্মিক বিপদে সরাসরি সহায়তা সাধারণত পাওয়া যায় না। কিন্তু সম্প্রতি এসব সহায়তা মিলছে। এটি অসহায়রা খুবই উপকৃত হন। তারা চান, এধরণের সহায়তা কার্যক্রম চালু থাক। একইসাথে সহায়তার পরিসর বাড়ানোরও দাবি তাদের।
এব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের আসল শক্তি জনগণের আস্থা। আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাগরিকদের কষ্টে পাশে দাঁড়ানো আমাদের পেশাগত ও নৈতিক দায়িত্ব। প্রকৃত অভাবগ্রস্ত মানুষ যেন সহায়তা পান, সে বিষয়ে আমরা সবসময় সচেষ্ট। এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। জেলার অন্যান্য অসহায় ও দরিদ্রদের এ সহায়তার আওতায় আনার মধ্য দিয়ে সহায়তার পরিধি বৃদ্ধি করা হবে।