সুজানগরে যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় দুদক কর্মকর্তাকে প্রধান আসামি করে মামলা, বিচার দাবিতে বিক্ষোভ

পাবনার সুজানগরের আমিনপুরে পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা আল আমিন (৩৫) হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তাকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার (২৩ জুন) রাতে নিহত আলামিন মিয়ার ভাই আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে আমিনপুর থানায় এ মামলা করেন।
মামলায় দুদকের সহকারী পরিচালক (এডি) হাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচ থেকে সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত আলামিন সুজানগর উপজেলার দক্ষিণ রাণীনগর গ্রামের মৃত শহিদুর রহমানের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ছিলেন।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অপরাধীর ব্যক্তি পরিচয় মামলায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে, আলামিন হত্যা মামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সোমবার রাণীনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা।
এ সময় বক্তারা বলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমানের নির্দেশে কয়েকজনের একটি দল পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড চালায়। হাফিজ সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাবের সমর্থক। নির্বাচনে আলামিনের পরিবার সমর্থিত প্রার্থী শাহিনুজ্জামান শাহিন হেরে যাওয়ার পর থেকেই নানাভাবে হত্যার পরিকল্পনা চালাচ্ছে হাফিজের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী দল। ঘটনারদিন আলামিন দাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও হত্যার সাথে জড়িতদের কেউই এখনো গ্রেফতার হয়নি। এক্ষেত্রে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে তাদের ফাঁসির দাবি জানান স্থানীয়রা।
নিহতের চাচাতো ভাই শাহিন মিয়া বলেন, দুদকে চাকুরী করেন বলে হাফিজের প্রচুর ক্ষমতা। চাকরির পাওয়ার আগে মাত্র বিঘা দেড়েক জমি ছাড়া কিছুই যার ছিলো না তার এখন অঢেল টাকা। সেই দাপটে কথায় কথায় শোনান, যাকে ইচ্ছা মার। যত টাকা লাগে আমি আছি। সেই গরমেই আমার চাচাতো ভাই আলামিনকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। উপজেলা নির্বাচনে দলের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহিনের পক্ষে নির্বাচন করেছি। হাফিজরা আ. ওহাবের ভোট করেছেন। নির্বাচনে শাহিন হেরে যাবার পর থেকেই আমদের একে খুন করবে, ওকে খুন করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেদের লোকদের শান্ত থাকতে বলেছি। মোটরসাইকেলে করে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলো আমার ভাই আলামিন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
নিহতের ভাই আলমগীর হোসেন কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আমার ভাইয়ের প্রশংসা এই এলাকার সবাই করবে। অন্যের বিপদে ঝাপিয়ে পড়া মানুষ ছিলো সে। অথচ তাকে এভাবে হত্যা করা হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। ওই হাফিজের এতো টাকা গরম। কত টাকা বেতন তার, শত শত কোটি টাকার সম্পদ কিভাবে হয়? আর সেই গরমে মানুষ হত্যার ঘোষণা দেয়া ও সেটি বাস্তবায়ন সরকারি চাকুরীজীবী হয়ে কিভাবে সম্ভব?
ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউকেই আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে আসামি গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর জানিয়ে সুজানগর সার্কেলের সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল করিম জানান, ঘটনা শুক্রবারের হলেও মামলা হয়েছে গতকাল। আসামি গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
গত শুক্রবার (২১ জুন) জুম্মার নামাজ শেষে আলামিন মোটরসাইকেলে করে পাশের বাদাই এলাকায় দাওয়াত খেতে যান। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাণীনগর বাজারের আগে দুর্বৃত্তরা আলামিনের পথরোধ করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। রাজশাহী নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।