সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে দেশ: রাষ্ট্রপতি

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার দেখানো পথে আমরা এগিয়ে যাব অগ্রগতি ও উন্নয়নের দিকে। দেশ ধাবিত হবে সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে। আমার সেই অগ্রযাত্রায় শামিল হব।’

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এসব কথা বলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, পাবনার উন্নয়নে নতুন গতি এসেছে। ২০০৮ সালে পাবনায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এতদিনে কোনো হাসপাতাল ছিল না। আজ সকালেই পাবনার ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা করা হয়েছে। পাবনা থেকে ঢাকা রেল চলাচল এ মাসেই শুরু করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক ও কারিগরি কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তা শুরু হবে। এছাড়াও ইছামতি নদী সংস্কার ও পুনঃখননের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে বাঙালি সংস্কৃতির সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সত্তরের নির্বাচনে জয় ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক এ কথা বলতে কোনা দ্বিধা নাই। স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অর্থহীন।

তিনি বলেন, পাবনা জেলা বাঙালি লোকসংস্কৃতির উর্বর ক্ষেত্র। এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির অনেক দিকপাল ও কীর্তিমানের জন্ম এ জেলায়। আমরা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। নৌকাবাইচ আমাদের এলাকায় তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও অমলিন। বাংলার আকাশে বাতাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সাংস্কৃতিক উপাদান গুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। এগুলোরয় সঠিক পরিচর্যা আমাদের সংস্কৃতিকে আরো অনেক উচ্চতা নিয়ে যেতে পারে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের ঐতিহ্য। ঈদ, পূজা, পার্বণ ও অন্যান্য সকল ধর্মীয় উৎসব এবং মৌসুমী ও ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণই আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশে পরিণত করেছে। বিশেষ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আমাদের যে কোন মূল্যে এগিয়ে নিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির বর্তমান যুগে দেশীয় লোকসংস্কৃতি সমূহ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এমতাবস্থায় নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি নৌকাবাইচ, পুতুল নাচ, জারি সারি, ভাওয়াইয়া গান, গ্রাম্য মেলা, নানাবিধ উৎসব ইত্যাদি তুলে ধরতে হবে।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, নৌকা বাইচ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একটি অনন্য ঐতিহ্য। বাংলার প্রতিটি আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে লোকসংস্কৃতির অমূল্য উপাদান। এসব লোকসংস্কৃতি সঠিকভাবে লালন করা গেলে এগুলো বিশ্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্যেরও অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। পাবনা জেলা বাঙালি লোক-সংস্কৃতির উর্বর ক্ষেত্র। নৌকা বাইচ আমাদের এলাকার তেমনই একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব।

তিনি বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি। তিনি বাংল্যর মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। স্বাধীনতার পর দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাঙালিকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ শুরু করেছিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি সংবিধানও আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক চক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা জাতির পিতাকে হারাই। এটা ছিল জাতি হিসেবে আমাদের চরম ব্যর্থতা। কারণ আমরা তাকে ধরে রাখতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু আমাদের সঙ্গে না থাকলেও তার নীতি-আদর্শই বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার পথ-নির্দেশিকা ও অনুপ্রেরণা।

রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতি জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়, তবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সকল মেগা প্রকল্পের কাজ সময়মত শেষ হয়েছে। জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে।

পাবনার উন্নয়নেও নতুন গতি এসেছে। ২০০৮ সালে পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এতদিনে কোন হাসপাতাল ছিল না। আজ সকালেই পাবনায় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণকাজের শুভ সূচনা করা হয়েছে। পাবনা থেকে রেল চলাচল এ মাসেই শুরু করার কথা থাকলেও প্রশাসনিক ও কারিগরি কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে অল্পদিনের মধ্যে পাবনা থেকে রেল চলাচল শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। এ ছাড়া পাবনার প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতি নদীর সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়ন তখনই ফলপ্রসু হয় যখন এর সাথে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা থাকে। তাই পাবনার উন্নয়নের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের কারণে আমরা বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারী হতে পারি৷ কিন্তু পাবনার উন্নয়নে আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো, এটাই জনগণের প্রত্যাশা।

পরে রাষ্ট্রপ্রতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম শুভ জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে পাবনার সাঁথিয়ায় ইছামতি নদীতে আয়োজিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফার্স্ট লেডি ড. রেবেকা সুলতানা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাঁথিয়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু।

অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, বেড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভার উদ্যোগে ইছামতি নদীতে গত ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তাহব্যাপী নৌকা বাইচের উদ্বোধন করা হয়। বৃহস্পতিবার প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বাগচী চ্যালেঞ্জার্স নামে নৌকা চ্যাম্পিয়ন ও শারিরভিটা এক্সপ্রেস নৌকা রানার্সআপ হয়। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় জমে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার বহু কাঙিক্ষত পাবনা মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।