পাবনার ঈশ্বরদীর গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা পরিষদ সড়কের বেহাল দশা। বড় বড় গর্তে পানি জমে সড়ক যেন ডোবায় পরিণত হয়েছে। বৃষ্টিতে এসব গর্তে হাঁটু পানি জমে যায়। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা। চার বছর ধরে এ অবস্থা থাকলেও ভাঙা সড়ক মেরামতে কোনো পদক্ষেপ নেই। দুর্ভোগ যেন বেড়েই চলছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে ঈশ্বরদী রেলগেট থেকে উপজেলার সাঁড়াঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ করা হয়। তবে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি ওজনের যানবাহন চলাচলে সড়কটি দ্রুত ভেঙে যায়। এ সড়কে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, সাবরেজিস্ট্রার অফিস, পদ্মা নদীর তীরবর্তী সাঁড়াঘাট এলাকার হাজারো মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। এ সড়ক ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত বালু বোঝাই ডাম্পট্রাক, ট্যাংক-লরি চলাচল। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটিতে বড় বড় গর্ত। যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। বালু বোঝাই দশ চাকার ডাম্পট্রাক, ট্রাক্টর, পাওয়ার ট্রলিসহ ছোটবড় অসংখ্য যানবাহন চলাচল করছে। ফলে ভাঙা সড়ক আরও বেশি ভাঙছে।
অটোরিকশা চালক আরশেদ আলী বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। এ রাস্তা দিয়ে এখন মানুষ ভয়ে রিকশার চড়ে যেতে চান না। কারণ যেকোনো সময় রিকশা উল্টে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।
অটোবাইক চালক আলতাফ হোসেন বলেন, এ সড়ক দিয়ে অটোবাইক চালালে প্রতি সপ্তাহে এক হাজার টাকা গাড়ি মেরামতের জন্য মেকারকে দিতে হয়। খুবই কষ্ট হয় যা বলে বুঝানো যাবে না।
পিয়ারপুর এলাকার পল্লী চিকিৎসক সাহাবুদ্দীন সালাম বলেন, অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই গাড়ি চলায় দ্রুত সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই দেখি কিছু বালু বোঝাই ট্রাক সড়কের গর্তে আটকে যায়। এছাড়া সড়কের গর্তে প্রায়ই অটোবাইক, রিকশা, অটোরিকশা (সিএনজি), মোটরসাইকেল উল্টে যাত্রীরা গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, এ যেন বেওয়ারিশ সড়ক। সরকারের কোনো বিভাগ এ সড়ক সংস্কার বা পুনর্নির্মাণে দীর্ঘদিনেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা বলে এটি নাকি জেলা পরিষদের সড়ক তাদের কিছু করণীয় নেই। আসলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ সড়ক মেরামতের জন্য কার কাছে যাবে।
পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়কটি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে আছে। এ সড়কে বালুবাহী ডাম্পট্রাকসহ অতিরিক্ত ওজনবাহী গাড়ি চলাচলের ফলে নষ্ট হয়ে গেছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে একাধিকবার খোয়া ও ডাস্ট ফেলে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করেছি। কাদা-পানিতে এ সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে এখন এটি এখন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে গেছে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পৌরসভার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বলেছেন আগামী বছর সড়কটি পুনর্নির্মাণ করা হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, এ সড়ক ১৭ টন ওজনের যানবাহন চলাচলে উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এখানে ৩০ টনের বেশি ওজনের মালামাল নিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এজন্য দ্রুত চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়ক পুনর্নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। এটি এখন নিয়মানুযায়ী দরপত্র আহ্বানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শেষে পুনর্নির্মাণ শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ শুরু হতে পারে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, ঈশ্বরদী পৌরসভার কিছু কিছু সড়ক চলাচলে অনুপযোগী। পৌরসভার ভেতরে জেলা বোর্ড, ডিস্ট্রিক বোর্ডের রাস্তা আছে। এগুলো আমরা ইচ্ছা করলেই পৌরসভা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করতে পারি না। এসব সড়কের মধ্যে অন্যতম শহরের রেলগেট থেকে উপজেলা পরিষদ হয়ে সাঁড়ার চানমারী পর্যন্ত একটি সড়ক। এটি জেলা বোর্ডের সড়ক। পৌরবাসীসহ সাঁড়া ইউনিয়নের মানুষের এ সড়কের চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখানে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তবুও সড়কের বেশকিছু জায়গায় পৌরসভা পক্ষ থেকে ইট, খোয়া, বালু ফেলে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করেছি। সড়কের যেখানে বড় বড় গর্ত হয়েছে সেখানে আবারো ইট, বালু ও খোয়া দিয়ে মেরামতের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত পুনর্নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যানের দৃষ্টি কামনা করছি।