শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রূপপুর প্রকল্পের আরও ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত আরও ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) প্রকল্প পরিচালক ও কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাছান স্বাক্ষরিত ৪৮৯ নম্বর স্মারকের এক দাপ্তরিক আদেশে এনপিসিবিএল-এ নিয়োগপ্রাপ্ত ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের কথা বলা হয়।
পত্রে আরও বলা হয়, বর্ণিতবস্থায় নিরাপত্তার স্বার্থে উক্ত ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ তাৎণিকভাবে বন্ধ করার অনুরোধ করা হলো।
সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন, ইকতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিপ্লব (সহকারী ব্যবস্থাপক-মেকানিক্যাল), শামীম আহমেদ (সহকারী ব্যবস্থাপক-মেকানিক্যাল), মো. মনির (উর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক-মেকানিক্যাল), মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন (সহকারী ব্যবস্থাপক-মেকানিক্যাল), মো. হোসেনুজ্জামান খাঁন (উর্ধ্বতন উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক-ইলেকট্রিক্যাল, মো গোলাম আজম (সহকারী ব্যবস্থাপক-মেকানিক্যাল), রিয়াজ উদ্দিন (টেকনিশায়ন-ইলেকট্রনিক্স) ও মো, ইসমাইল হোসেন (টেকনিশিয়ান-ইলেকট্রিশিযান)।
রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস সাময়িক বরখাস্তের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি আজ (বুধবার) সকালে মেইলে চিঠি পেয়েছি। এর বেশী কিছু আমার জানা নেই।
সাময়িক বরখাস্তের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা ও এনপিসিবিএলে তাঁরা শৃঙ্খলাবিরোধী বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। কর্তব্যে অবহেলা করেছেন এবং করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী ১০ দিনের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশাধিকার নিয়ে আরেকটি চিঠিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ ও আবাসিক এলাকা গ্রিনসিটিতে প্রবেশ বন্ধ করা হলো।
এর আগে গত ৮ মে এক আদেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ইমপ্লয়িজ সার্ভিস রেজুলেশন’ ২০২৫ এর প্রবিধান ৫২.১ অনুযায়ী ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। অব্যাহতিপ্রাপ্ত মধ্যে ১৫ জন বিএসসি এবং ৩ জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনপিসিবিএল-এর এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের জেরে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে গত ১৮ জনকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি (টার্মিনেশন) দেওয়া হয়।
প্রকল্পের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করে জানান, বিভিন্ন দাবিতে ঈশ্বরদীর রূপপুরে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ গত ২৮ এপ্রিল আন্দোলন শুরু করেন। ৬ মে তাঁরা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। পরদিন ৭ মে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে কোম্পানির অফিসে তারা অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন। এতে এনপিসিবিএল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি ও কোম্পানির আইন মেনে চলার চিঠি দেয়। এরই মধ্যে গত ১৩ মে মঙ্গলবার তারা পুনরায় প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা প্রকল্পের বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বরত ম্যানেজারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধামকি দেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরখাস্ত একজন প্রকৌশলী বলেন, তাঁরা সবাই দক্ষতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে প্রকল্প পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাছানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।