লাইলির দারিদ্র জয়ের গল্প

পাবনা সদর উপজেলার দারিদ্র লাইলি দারিদ্রতাকে বিমোচন করে হতে চান সফল উদ্যোগতা। বুধবার লাইলির বাড়ী গিয়ে জানাযায়, পাবনার নন্দনপুর গ্রামের এক দূরন্ত মেয়ে মোছা: লাইলী খাতুন।

সারাদিন ঘুরে বেড়াতেন গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। বাবার অভাব অনটনের সংসারে সুখের কমতি ছিল না। ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিল লাইলী খাতুন। সংসারে বাড়তি খরচ কমাতে তাকে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে পাশের গ্রাম, তেলিগ্রামে মো: শাহীন প্রামানিকের সাথে বিয়ে হয়। লাইলী খাতুন অনেক স্বপ্ন নিয়ে স^ামীর সংসার করতে যায়। কিন্তু শুরু থেকেই তার স্বামীর সংসারে অভাব অনটন লেগেই ছিল। বিয়ের কিছু বছরের মধ্যেই লাইলী খাতুন এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী হন। পরিবারের সদস্য বাড়ার পাশাপাশি তুলনামুলক আয় বৃদ্ধি না বাড়ায় অভাব আরো বাড়তে থাকে। তার স^ামী দিন মজুরী কাজ করে দুই বেলা কোন রকম ভাত জোগাড় করতে হিমসিম খেত। অতিদারিদ্রতা উত্তরেন চেষ্টায় মরিয়া হযে উঠে লাইলি।

এই অবস্থায় ২০২৩ সালে তেলিগ্রামে ব্র্যাক দুবলিয়া শাখার অধিনে ব্র্যাকের আলট্রা-পাওয়ার গ্যাজুয়েশন (ইউপিজি) কর্মসূচির গ্রামীন অংশগ্রহনমূলক সমীক্ষায় অতি-দরিদ্র হিসেবে তার খানাটি অর্ন্তভুক্ত হয়। পরবর্তিতে দুই দফায় যাচাইয়ের পর ইউপিজির কর্মসূচির গ্রুপ-৩ এর চূড়ান্ত সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তার গ্রামে চুড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত সকল সদস্যদের সাথে লাইলী খাতুনকেও ডাকা হয় এবং ব্র্যাক ইউপিজি কর্মসূচির সকল এন্টারপ্রাইজের সুবিধা অসুবিধা আলোচনা করলে তার পূর্বে অভিজ্ঞতা থাকায় গবাদিপ্রাণি পালন অপশনে থেকে ১টি ষাঁড় গরু পালন করতে আগ্রহী হন। এরপর অন্যান্যদের সাথে লাইলী খাতুনকেও গবাদি প্রাণী পালন এন্টারপ্রাইজের ১টি ষাঁড় গরু পালনের উপর ওরিয়েন্টশন প্রদান করা হয়। ওরিয়েনটেশন শেষে কর্মসূচি থেকে ২৮,০০০/-(আঠাশ হাজার) টাকা প্রদান করা হয়। উক্ত টাকা দিয়ে লাইলী খাতুন একটি ষাড় গরু ক্রয় করে যতœ সহকারে পালন করতে থাকেন। গরুটি ছয় মাস পালন করার পর ৮৯০০০/-(উননব্বই হাজার) টাকা বিক্রয় করেন।

তিনি পূনরায় ১টি ষাঁড় গরু ক্রয় করেন এবং অবশিষ্ট টাকা দিয়ে ১টি ছাগল ও তার ̄স্বামীর জন্য ১টি ভ্যান ক্রয় করেন। দিনমজুরের পাশাপাশি তার ̄স্বামী পরবর্তীতে ভ্যান চালাতে শুরু করে। ̄স্বামীর আয় ও ছাগলের বাচ্চা বিক্রি করে তিনি ৩৩ শতাংশ জমি বন্ধক নেন। বর্তমানে (জুলাই ২০২৪) লাইলী খাতুনর ১টি ষাঁড় গরু, ২টি ছাগল, জমি বন্ধক-৩৩ শতাংশ, ১টি ভ্যান(রিক্সা), মুরগী ১০টি এবং একটি টেকসই ঘর আছে। আজ তার চোখে মুখে আত্মনির্ভরশীলতার হাসি।

লাইলি বলেন, তার অসহায়ত্বের সময় সহযোগিতা এবং দিক নির্দেশনা প্রদানের জন ব্র্যাকের আলট্রাপাওয়ার গ্যাজুয়েশন কর্মসূচির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আল্লাহ দিলে এখন আর আমি দরিদ্র নই। আমি স্বাবলম্বি হয়ে এই এলাকার গবীব মানুষদের নিয়ে নিজের এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করবো।
পাবনা রিজিওনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো: মোকাদ্দেস হোসেনের বলেন, “ব্র্যাকের আলট্রা পাওয়ার গ্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম লক্ষিত জনগোষ্ঠীর মানসিক, অথনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নে একটি বড় শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।”

ব্র্যাকের পাবনা জেলার ব্র্যাক ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর, শরীফ হোসেন বলেন, “অতি-দরিদ্র পরিবারসমূহের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য ব্রাকের আলট্রা পাওয়ার গ্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম বিভিন্ন সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে টেকসই জীবিকা ও জীবনযাত্রার সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে কাজ করছে।” স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সরকারের কার্যক্রম প্রচার, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধসহ নানা সামাজিক কার্যক্রম করছে ব্র্যাক।