স্টাফ রিপোর্টার:
যৌতুক দাবিতে নির্যাতন, প্রতারণা ও অর্থ লুটের অভিযোগ উঠেছে স্বামী শহিদুল ইসলাম (৪০) ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। প্রতিকার না পেয়ে ভূক্তভোগী নারী থানায় মামলা দায়ের করলে সেই মামলা তুলে নিতে হত্যা হুমকিরও অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এমন অভিযোগ তুলেছেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রসুলপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আইরিন খাতুন। এ নিয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও ( জিডি নং: ১০২০ ; ২০/১০/২০২৪) করেছেন আইরিন খাতুন।
শহিদুল ইসলাম পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে এবং ভূক্তভোগী আইরিন খাতুন শহিদুলের স্ত্রী ও কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার এলঙ্গীপাড়ার মৃত আব্দুল হকের মেয়ে।
ডায়েরীতে বলা হয়েছে, শহিদুল ইসলাম তার স্বামী। কিন্তু যৌতুক দাবিতে নির্যাতন ও প্রতারণার অভিযোগে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাভার মডেল থানায় শহিদুল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একটি মামলা (মামলা নং: ৫৫) দায়ের করেন। যেটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। কিন্তু এ মামলা তুলে নিতে সম্প্রতি তাকে মারধর করা হয়েছে ও তার হতে থাকা দামী স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি মামলা না তুলে নিলে হত্যা করবে বলেও হুমকি দিয়েছে।
পূর্ব মামলার এজাহার ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ভালবেসে বিয়ে করেন শহিদুল ও আইরিন। উচ্চ শিক্ষিত হওয়ায় দুজনেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে চাকুরী করতেন। বিয়ের পর শহিদুলের পরিবার আপত্তি দেখালে চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হন আইরিন। পাঁচ বছর সুখের সংসারে কোনো সন্তান নেননি এ দম্পতি। এরপর চেষ্টা করেও সন্তান না হওয়ায় ভারতে উচ্চ চিকিৎসা নিতে যান তারা। সেখান থেকে ফিরে একের পর এক সমস্যা বাধতে থাকে। হুট করেই ২৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে। এতো টাকা না দিতে পারায় আইরিনের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। মারধর করায় একাধিকবার হাসপাতালে চিকিৎসাও নিতে হয়েছে আইরিনকে। একপর্যায়ে আইরিন জানতে পারেন শহিদুল তার অফিসের এক নারীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত এবং নানারকম বাজে নেশাতেও আসক্ত। সবশেষ ওই নারীকে গোপনে বিয়ে করেছেন বলে জানতে পারেন আইরিন। এগুলোর প্রতিবাদ করায় আইরিনের ওপর আরো নির্যাতন নেমে আসে। এরপর বাধ্য হয়ে চলতি বছরের গত ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় শহিদুলকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন আইরিন। এতে শহিদুলের মা, বোন, ভাই ও পরকীয়ার ফাঁদে ফেলা নারী সহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় পুলিশ শহিদুলকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠালে তার পরিবারের লোকজনের অনুরোধে শর্তসাপেক্ষে আইরিনের সহযোগিতায় শহিদুল হাজত থেকে মুক্তি পায়। এতে শর্ত থাকে পরকীয়ায় বিয়ে করা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে প্রথম স্ত্রী আইরিনকে প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে সংসার করতে হবে এবং যৌতুক দাবি বা কোনো ধরণের অশান্তি করা যাবে না। কিন্তু সেটি না মেনে শহিদুল আইরিনকে মারধর করে বাসায় থাকা তার নগদ দেড় লাখ টাকা, ১০ ভরি সোনার গহনা কয়েকটি দামী ফোন, ল্যাপটপ, একটি ই-পাসপোর্ট, এক হাজার ভারতীয় রুপি, এক হাজার ইউএস ডলার ও এটিএম কার্ড লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া অজ্ঞাতসরে ব্যাংকিং এ্যাপসের মাধ্যমে আইরিনের ইসলামি ব্যাংক একাউন্ট থেকে এমটিবি ব্যাংকে দুই লক্ষ চৌষট্টি হাজার টাকা শহিদুল ট্রান্সফার করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়ে গত ২৭ জুলাই সাভার থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে শহিদুল ও তার পরিবারের অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে বলে জানান আইরিন।
এব্যাপারে ভূক্তভোগী আইরিন বলেন, শুরুতে সংসার ভালো কাটলেও বেবী কনসিভে প্রব্লেম দেখা দিলে বিয়ের বছর পাঁচেক পর ভারতে আমরা চিকিৎসা করাতে যাই। সেখানে উভয়েরই কিছু শারিরীক জটিলতা থাকলেও সন্তান জন্মদানে শহিদুলের সমস্যা প্রকট বলে জানান চিকিৎসকরা। এ সংক্রান্ত রিপোর্টও আছে। এরপর হুট করেই ২৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে শহিদুল ও তার পরিবার। বিয়ের সময় ওর পরিবারের চাহিদামতো নগদসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলো আমার পরিবার। আমার বাবা-মা বেঁচে নেই। শুধু ভাই-বোনোর আছেন। তাদের পক্ষেও এ টাকা দেয়া সম্ভব নয় জন্য এ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এতে আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। আবার আমার যা কিছু ছিলো, সব লুটে নিয়ে গেছে। আমি এতিম, আমার প্রভাবশালী কেউ নাই বলে আমার ওপর এতো অবিচার হচ্ছে। আমি এর বিচার চাই।
পলাতক থাকায় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেষ্টা করেও অভিযুক্ত শহিদুল ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান বলেন, অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। ফলে তাদের গ্রেফতার করতে সময় লাগছে। তবে দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।