শীতের তীব্রতায় জবুথবু হয়ে পড়েছে পাবনার জনজীবন। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বাইরে বের হওয়াই যেন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শৈত্যপ্রবাহ ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বুধবারও (২৪ জানুয়ারি) পাবনা জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এনিয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো পাবনার ১ হাজার ৬৬৪টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো। এর মধ্যে রয়েছে ১১৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫২৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী স্বাক্ষরিত পৃথক আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে থেকেও একই কারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রেও এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার (২১ জানুয়ারি) পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) পাবনা জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তার আগেরদিন রোববারও একই কারণে সোমবার বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ছিল।
তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই পরে বিদ্যালয় বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা ও জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী।
পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া কর্মকর্তা নাজুমল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন সোমবার (২২ জানুয়ারি) ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রোববার (২১ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার তাপমাত্রা আরও নিম্নমুখী হতে পারে।
পাবনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী বলেন, আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী বুধবার পাবনার বিভিন্ন উপজেলায় তাপমাত্রা নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেটি বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে তৃতীয়দিনের মতো বুধবারও জেলার সব বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। বেলা ১১টা থেকে ক্লাস শুরু করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়েও আলোচনা চলছে। তীব্র শীত যতদিন থাকবে ততদিন একটু বিলম্ব করে স্কুলের ক্লাস শুরু করানো যায় কিনা, সে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়া পর্যবেক্ষক নাজমুল হক জানান, মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের জেলার সবনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল সোমবার (২২ জানুয়ারি) ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে জনপদ। শীতবস্ত্রের অভাবে কনকনে ঠান্ডায় দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের। জীবিকার তাগিদে কাজে বের হয়েছেন দিনমজুরসহ রিকশা-ভ্যানচালকরা। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীদের চাপ। পাবনার দুবলিয়া, হাজিরহাট রোড, রেলওয়ে স্টেশন, বাসটার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কনকনে হিমেল বাতাস ও তীব্র শীতে মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। পথচারী, রিকশাচালক ও দুস্থদের খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।