স্টাফ রিপোর্টার:
বেতন ভাতা চাওয়ায় ইউপি সদস্যদের মারধর ও ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনতাজ আলীর বিরুদ্ধে। বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল ১১ টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাঁচ ইউপি সদস্যের। এঘটনার বিচার দাবিতে মালিগাছাবাসীর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে পাবনা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছুরিকাহত ইউপি সদস্য নাহিতের বোন রিনা খাতুন। এছাড়া ইউপি সদস্য মাসুদ রানা, আঞ্জারুল ইসলাম ও মনছুর চেয়ারম্যান মুনতাজের নানা অনিয়ম তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
ছুরিকাহত ইউপি সদস্য নাহিদের বোন রিনা খাতুন বলেন, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনতাজ আলী বিগত সরকারের সময় প্রভাব খাটিয়ে নামে বে নামে অবৈধ সম্পত্তির মালিক হয়েছে। মুনতাজের বিরুদ্ধে কোন কথা বললেই সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষদের উপর জুলুম অত্যাচার করে। তিনি বলেন, গত ২৮ তারিখে আমার ভাই নাহিদসহ আরও ৪ ইউপি সদস্য তার অন্যায়ের প্রতিবাদ ও তার কাছে বেতন চাইতে গেলে চেয়ারম্যান মুনতাজের নেতৃত্বে ৪ জন ইউপি সদস্যসহ আমার ভাইয়ের উপর হামলা করে। এতে আমার ভাই গুরতর আহত হয়ে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। ভাইয়ের হত্যা চেষ্টার ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ের সেবা বাস্তবায়নে সরকার থেকে দেয়া বরাদ্দ বণ্টনে বৈষম্য করতেন চেয়ারম্যান মুনতাজ। টিআর, কাবিখা ও চল্লিশ দিনের কর্মসূচি সহ যা কিছু কাজ আসতো তার সবই নিজের হাতে রাখেন এবং আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে বাস্তবায়ন করান। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করেন। নামমাত্র কাজ করে পুরো বিল তোলার অভিযোগও আছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তার আজ্ঞাবহ ইউপি সদস্যদের বিভিন্ন প্রকল্পে নানারকম নৈতিক ও অনৈতিক ব্যাপক সুবিধা দিলেও নাহিদ, মনসুর ও তুহিনসহ পাঁচ ইউপি সদস্যকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বঞ্চিত করেন। এমনকি পরিষদ থেকে মাসিক যে সম্মানি পাবার কথা মাসের পর মাস সেটিও ইউপি সদস্যদের দেন না। দাবি জানালে নানা অযুহাতে এড়িয়ে যান।
মারধরের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইউপি সদস্যরা বলেন, বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল ১০টায় পরিষদে একটি বৈঠক ছিলো। সেখানে নানা বিষয়ে আলাপকালে বরাবরের মত আবারও আমাদের বঞ্চিত করা হয়। অনেক পুরনো বিল পাবার বিষয়ে বার বার বললেও কোনো ব্যবস্থা নেননি, কয়েক মাসের বেতন ভাতাও দেননি। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন মারতে আসে। আমরা কোনোরকমে রুম থেকে বের হয়ে আসতেই বাইরে তার ড্রাইভার ও রাজু সহ একদল সন্ত্রাসী লোহার রড, বাঁশের লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর শুরু করে। এতে আমরা আহত হই। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেখান থেকে বেরিয়ে আসলেও স্থানীয় কলেজ গেইটে এসে আবার তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এসময় ছুরি দিয়ে কোমরের নিচে পেছনে আমাকে আঘাত করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়।
ছুরিকাহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ইউপি সদস্য নাহিদ। এব্যাপারে তিনি বলেন, উনি নির্বাচিত হবার আগে মানুষের কাছে যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তার কোনোটাই রক্ষা করেন নাই। উনার পছন্দের লোকদের নানারকম অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে আসছেন। উল্টো আমাদের বঞ্চিত করছেন। অধিকাংশ কাজ উনি নিজের হাতেই রাখেন। বেতনভাতাটাও ঠিকমতো দেন না। এ নিয়ে কথা বলায় ব্যক্তিগত বাহিনী দিয়ে আমাদের ওপর এমন হামলা করিয়েছেন। ছুরিকাহত করেছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কিভাবে সন্ত্রাসী বাহিনী লালন পালন করেন এবং ইউপি সদস্যদের ওপরই প্রয়োগ করেন? এর সঠিক বিচার চাই।
তবে এসব অভিযোগকে মিথ্যা দাবি মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনতাজ আলীর। তিনি বলেন, সেদিন স্যানিটারি বিষয়ক একটি মিটিং ছিলো। সেসব নিয়ে আলাপকালে তাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে ওই মেম্বাররা হট্টগোল শুরু করে। একটি সাধারণ মেম্বারের ওয়ার্ড একটি, কিন্তু মহিলা মেম্বারের ওয়ার্ড তিনটি। এক্ষেত্রে মহিলা মেম্বাররা বরাদ্দ বেশি পাবে এটাই স্বাভাবিক। সেটা ওই মেম্বাররা মানতে নারাজ। এ নিয়ে রেগে তারা মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে যান। বাইরে কারো সাথে ঝামেলা হয়েছে কি না বা কিভাবে কে আহত হলো আমি এর কিছুই জানি না।