বিপ্লবী আমিনুল ইসলাম বাদশা : শেখ রফিক

১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল, রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডের ৭ জন রাজবন্দীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শহীদরা হলেন ১. কমরেড বিজন সেন (রাজশাহী), ২. কম্পরাম সিং (দিনাজপুর), ৩. আনোয়ার হোসেন (খুলনা), ৪. সুধীন ধর (রংপুর), ৫. হানিফ শেখ (কুষ্টিয়া), ৬. সুখেন ভট্টাচার্য (ময়মনসিংহ), ৭. দেলোয়ার হোসেন (কুষ্টিয়া)। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনের নির্দেশ মতো এই হত্যকাণ্ড সংগঠিত হয়। সেদিন শুধু গুলি নয়, বন্দীদের ওপর নিষ্ঠুরভাবে লাঠিচার্জও করা হয়েছিল। যারা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেঁচে গেলেন তারাও নির্মম অত্যাচার থেকে রেহাই পেলেন না।

খাপড়া ওয়ার্ডে ৪১ রাজবন্দী ছিল। বাকিরা সবাই আহত হয়েছিলেন। আহতদের মধ্যে যারা পানি পানি বলে চিৎকার করেছিলেন, পানির বদলে তাঁদের মুখে প্রস্রাব করে দেয়া হয়েছিল।

খাপড়া ওয়ার্ডে ওই বর্বর আক্রমণে আহত হয়েছিলেন কমরেড আশু ভরদ্বাজ, প্রসাদ রায়, আমিনুল ইসলাম বাদশা, ফটিক রায়, শ্যামাপদ সেন, সত্য ভট্টাচার্য, সৈয়দ মনসুর হাবিব, খবির শেখ, ডোমারাম সিং, অভরন সিং, কালী সরকার, ভূপেন পালিত, প্রিয়ব্রত দাশ, অনন্ত দেব, অনিমেষ ভট্টাচার্য, আবদুল হক, নুরুন্নবী, আবদুস শহীদ, রশিদউদ্দিন, নাসিরউদ্দিন আহমদ, সিতাংশু মৈত্র, পরিতোষ দাশগুপ্ত, গরিবুল্লাহ সরদার, বাবর আলী, হিরেন সেনগুপ্ত, মাধব দত্ত, ডা. গণেশ সরকার, মো. ইলিয়াস প্রমুখ।

আমিনুল ইসলাম বাদশা জন্মেছিলেন ১৯৩০ সালের ৩০ এপ্রিল, পাবনা শহরের কৃষ্ণপুর মহল্লায়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৮ সালে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পাবনা জেলার রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার কারণে পাকিস্তান পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আন্দোলনের চাপে তাকে কয়েক দিন পর পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু মাসখানেক পরে পুনরায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৯৫২ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পান। ১৯৫৩ সালে বন্দী মুক্তি আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন পরিচালনার জন্য গণতান্ত্রিক কর্মীশিবিরের পাবনা জেলার যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। ১৯৫৭ সালে ন্যাপ গঠিত হলে তিনি ন্যাপের মধ্যে পার্টির কাজ করেন। ১৯৫৮ তে বিয়ে করেন। ১৯৬০ সালে বেআইনী বই রাখার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় তিনি একমাস পর মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে সার্বজনীন ভোটাধিকারের দাবিতে ন্যাপ-আওয়ামীলীগের যৌথ আন্দোলন চলাকালে পুলিশ আবার তাকে গ্রেফতার করে। ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করার কারণে তাকে পুনরায় জেলে যেতে হয়। ১৯৭০ এর প্রাদেশিক নির্বাচনে, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে পাবনা সদর এলাকা থেকে ন্যাপের মনোনীত পার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ১৯৭১সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিয়েজিত করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালের পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তিনি দেড় বছর জেলে ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পাবনা জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে ন্যাপের বিভক্তির পর তিনি সৈয়দ আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি গঠন করেন এবং এই পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৮ সালের ৪ আগষ্ট মারা যান।