কোনো শুভ উদ্যোগ নিতে অর্থবিত্ত নয়, প্রয়োজন হয় মানসিকতার। তারই জ্বলন্ত উদাহরণ পাবনার বেড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের তাঁত শ্রমিক বাদশা আলম ওরফে সাইকেল বাদশা। পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের বাতেন মোল্লার ছেলে বাদশা আলম। পেশায় মূলত তাঁত শিল্পের কারিগর। তাঁতের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। সপ্তাহের ছয়দিন তাঁতের লুঙ্গি বুনন করে তা হাটে বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে কোনোভাবে কেটে যাচ্ছে তার জীবন।
সপ্তাহের মঙ্গলবার তাঁতের কাজ বন্ধ রাখেন সবাই। তাই সেই ছুটির দিনটিকে তিনি সমাজের মানুষের জন্য দিয়ে থাকেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিজের বাইসাইকেলের চার পাশে বেধে রাখা ছোট ছোট কৌটায় বিভিন্ন প্রকারের সবজির বীজ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পথ চলতে গ্রামে কারো বাড়ির আঙিনায় বা পাশে সামান্য জায়গা পড়ে থাকতে দেখলেই সেই বাড়ির লোকজনকে ডেকে তাদের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেন।
পাশাপাশি বিনামূল্যে তাদের লাউ, কুমড়া, টমেটো, শিম, শাক, বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন সবজির বীজ বিতরণ করেন তিনি। শুধু বীজ বিতরণ নয়, কীভাবে বীজ রোপণ করতে হয় তাও শিখিয়ে দেন। পাশাপাশি কারো কোনো গাছে সমস্যা হলে সেটারও দেখভাল করেন তিনি নিজেই। এ যেন গ্রামের প্রান্তিক মানুষের কৃষি বন্ধু। এভাবেই নিজ উদ্যোগ আর পরিশ্রমে গ্রামের পতিত জমিকে আবাদ উপযোগী করে তুলছেন বাদশা আলম।
নিজের সম্বল একমাত্র বাইসাইকেলটি নিয়ে গ্রামের পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে বিনামূল্যে শাকসবজির বীজ বিতরণ এবং সমাজ সচেতনতামূলক কাজ করছেন তিনি। আর এই সামাজিক কাজের জন্য গ্রামের মানুষ তাকে সাইকেল বাদশা নামেও ডেকে থাকে।
বাদশা শুধু সবজির বীজ সরবরাই নয় নিজ খরচে বাল্যবিবাহ, মাদক, যৌতুক বিরোধী লিফলেট বিতরণসহ সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড তৈরি করে তা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শন করেন।
বাদশার এমন মানবকল্যাণ মূলক কাজ প্রশংসিত হয়েছে বেড়া উপজেলাসহ পুরো পাবনা জেলায়। গ্রামের মানুষের কাছে সাদা মনের মানুষ হিসেবে বাদশা আলম জনপ্রিয়।
এই ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজকে প্রথমদিকে পাগলামি বলে মনে হলেও কখনও নিরুৎসাহিত করেননি তার স্ত্রী মিনারা খাতুন। স্বামীর এ ধরনের কাজের জন্য গর্ববোধ করেন তিনি।
বাদশা আলম জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বীজ বিতরণ কাজের উৎসাহ ছোটবেলায় তিনি তার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন। তার মায়ের কাছ থেকে অনেকেই বাড়ির আঙ্গিনায় সবজির আবাদের জন্য বীজ নিয়ে যেতেন। বর্তমানে স্ত্রীসহ পুরো পরিবার তার এই কাজের জন্য তাকে সহযোগিতা করেন। সাধ্য অনুযায়ী আজীবন মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চান তিনি।
বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু বলেন, আমার উপজেলাতে এমন মানুষ আছে সেটা জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। খুবই ভালো লেগেছে তার এমন মহতী সমাজ সেবামূলক কাজের জন্য। আমি এবং আমার পরিষদ তার কাজের জন্য সহযোগিতা করতে চাই। সরকারের কাছে আমরা আবেদন করবো তাকে এই দীর্ঘ সময় সামাজিক কাজের একটি সরকারি স্বীকৃতি যাতে প্রদান করেন। এই যুবক একজন সাদা মনের মানুষ এটা আমরা বলতেই পারি।
তিনি আরও বলেন, এমন নিঃস্বার্থ মানুষরাই হতে পারে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অন্যরকম অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বাদশার মত সাদা মনের মানুষ ছড়িয়ে পড়ুক দেশের প্রতিটি গ্রামে। এতে নিজের চাহিদা পূরণ হয়ে বাড়তি খরচ কমবে। সবুজময় হবে গ্রামীণ জনপদ।