বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর

বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে মুখিয়ে রয়েছে প্রায় ডজনখানেক বিদেশি এয়ারলাইন্স। তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে, মৌখিকভাবে জানিয়ে রেখেছে। তবে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলাকালীন আপাতত কোনো এয়ারলাইন্সকে নতুন করে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেবে না বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

পৃথিবীর ১৭২টি দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী ও শ্রমিক বৈধভাবে কাজ করছেন। সেসব শ্রমিকদের দেশে আনা-নেওয়া করার জন্য পর্যাপ্ত ফ্লাইট নেই বাংলাদেশের দুটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের। তাই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৮টি বিদেশি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের প্রায় ডজনখানেক এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বেবিচকে যোগাযোগ করছে। ফ্লাইট পরিচালনার প্রাথমিক পরিকল্পনাও জানিয়েছে তারা, আবেদন করেছে বাংলাদেশের আকাশে ডানা মেলার। বেবিচক থেকে তাদের ইতিবাচক সাড়া দিলে ফ্লাইট পরিচালনার প্রক্রিয়া শুরু করবে তারা।

সদ্য ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা এয়ারলাইন্সগুলো হচ্ছে শ্রীলঙ্কার ফিটস এয়ার, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার, আবুধাবিভিত্তিক উইজ এয়ার, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা ইন্দোনেশিয়া, ইরাকের ইরাকি এয়ারওয়েজ, জর্দানের রয়াল জর্দানিয়ান, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, এয়ার ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ।

আবেদনকারীদের মধ্যে সর্বশেষ অনুমতি পেয়েছে আফ্রিকাভিত্তিক ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। তারা ২০২২ সালে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল। চলতি বছরের অক্টোবরে তারা বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিতে পারে। এয়ারলাইন্সটি দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকান দেশগুলোতে বসবাসরত বাংলাদেশি যাত্রীদের ইথিওপিয়ায় ট্রানজিট দিয়ে অল্প সময়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দিতে চায়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইন্সগুলো এসব যাত্রী বহন করছে।

আবেদন করা এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে উইজ এয়ারকে বেবিচকের পক্ষ থেকে আপাতত ফ্লাইট পরিচালনার ‘অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না’ বলে জানিয়ে দিয়েছে বেবিচক। এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম থেকে দুবাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চেয়েছিল। ভবিষ্যতে বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়লে (তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে) তাদের অনুমতি দেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে।

বেবিচকের কাছে সর্বশেষ আবেদনটি ছিল শ্রীলঙ্কার ফিটস এয়ারের। ঢাকা থেকে শ্রীলঙ্কার কলম্বো রুটে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনার করতে চেয়েছে তারা। তবে সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বাকিরাও অপেক্ষমাণ রয়েছেন।

এসব এয়ারলাইন্স ছাড়াও বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য মৌখিকভাবে বেবিচককে জানিয়েছে আরও ৪টি এয়ারলাইন্স। পাকিস্তানের পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ), উজবেকিস্তানের উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজ, সুইজারল্যান্ডের সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স ও রিয়াদ এয়ার।

তাদের মধ্যে পিআইএ ২০২২ সালে বেবিচককে ফ্লাইট পরিচালনার কথা জানায়। বেবিচক তাদের আবেদনের জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়। এছাড়াও বাকি ৩টি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতদের দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর কাছে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহের কথা জানান।

বেবিচক জানায়, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের পর আর কাউকে অনুমতি দিচ্ছে না বেবিচক। এয়ারক্রাফট রাখার জায়গা স্বল্পতার কারণে চাইলেও এখন আর কাউকে অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হলে একসঙ্গে মোট ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) হয়ে যাবে। তখন একে একে অনুমতি পাবে সবাই।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের স্বপ্নের থার্ড টার্মিনাল আগামী ৭ অক্টোবর উদ্বোধন (আংশিক) করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য এবং সফট ওপেনিংকে সামনে রেখে প্রতিদিন ১১ থেকে ১২ হাজার শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে বলে বেবিচক সূত্রে জানা গেছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার তাদের ফ্লাইট পরিচালনার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে। তবে আপাতত (বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের আগে) আমরা কাউকে অনুমতি দিচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স অনেক আগেই আবেদন করেছিল। তাদের সঙ্গে সেপ্টেম্বরেই এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট (এএসএ) স্বাক্ষরিত হতে পারে। এরপর তারা ফ্লাইট শুরু করতে পারে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহের বিষয়টি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। বাংলাদেশে যে হারে যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে সে তুলনায় এয়ারইলাইন্স ও ফ্লাইট সংখ্যা কম। এয়ারলাইন্সে সিটের তুলনায় যাত্রী বেশি হওয়ার কারণে ভাড়া অনেকসময় বেড়ে যায়। যদি নতুন নতুন এয়ারলাইন্স আসে তাহলে আমাদের যাত্রীদের জন্য সুখবর। যাত্রীরা তাদের পছন্দের এয়ারলাইন্স বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে, ভাড়াও হবে প্রতিযোগিতামূলক। এয়ারলাইন্সের সেবার মান বাড়বে, এতে যাত্রীরাই লাভবান হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ২৮টি বিদেশি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সেগুলো হচ্ছে এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার এশিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া, বাটিক এয়ার, ক্যাথে প্যাসিফিক, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স, চায়না সাউদার্ন, ড্রুক এয়ার, ইজিপ্ট এয়ার, এমিরেটস এয়ারলাইন, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, ফ্লাই দুবাই, গালফ এয়ার, হিমালয়া এয়ারলাইন্স, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স, জাজিরা এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, মালদ্বিভিয়ান, ওমান এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, থাই এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স এবং ভিস্তারা এয়ারলাইন্স।