বন্ধ হয়ে গেল সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ফুড ভিলেজ হোটেল

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। যানজন নিরসনে ইন্টারএক্সচেঞ্জ নির্মাণ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করায় সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে হোটেলটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় ২২ জেলার সড়ক পথের যাত্রীদের ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের পথে যাত্রা বিরতির বহুল পরিচিত এ হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের যাত্রা বিরতিতে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়েছে। হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হোটেলের বিভিন্ন পদে কর্মরত প্রায় ৬০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।দূরপাল্লার প্রায় সব বাস, কোচ, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের যাত্রীরা যাত্রা বিরতি নিয়ে এ হোটেলটিতে ফ্রেশ হওয়ার পাশাপাশি আহার সেরে নিতো।

সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ যানজট নিরসনে হাটিকুমরুল গোলচত্বরে ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশাল এলাকার ভূমি অধিগ্রহণ করে। ফলে ফুড ভিলেজ প্লাস এই অধিগ্রহণ এলাকার মধ্যে পড়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা ভেঙে ফেলার জন্য হোটেলটি বন্ধ ঘোষণা করে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

এলাকাবাসী জানায়, উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে উন্নয়ন কাজের জন্য ঢাকা-রংপুর চার লেন নির্মাণ কাজ চলছে। পাশাপাশি হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় নির্মাণ হতে যাচ্ছে ইন্টারচেঞ্জ। আর এই ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্ধ হয়ে গেছে হোটেলটি। এর সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে হোটেলটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চা-পান-সিগারেটের প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র দোকান। এতে এসব দোকানের ব্যবসায়ীরা পথে বসে গেছেন। তারা এখন কোথায় যাবে কি করবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। এ ছাড়াও এখন দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনগুলো কোথায় যাত্রা বিরতি দেবে এ নিয়েও তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ হোটেলটি এসআর গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন এসআর গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাসে কাজ করা এক শ্রমিক জানান, এখানে ওয়েটার, সহকারী, বারবিকিউ, চাইনিজ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বাবুর্চিসহ বিভিন্ন পদে প্রায় ৬০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এরা সবাই এখন বেকার হয়ে পড়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের পাওনা টাকা না পরিশোধ করেই হোটেলটি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় তারা বেকায়দায় পড়েছে। তবে মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার এরশাদ আলী বলেন, ফুড ভিলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন থেকে শ্যামলী পরিবহনের সব বাস ১৬ মাইলে অবস্থিত হোটেল হানিফে দাঁড়াবে। হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় দাঁড়ানো বাসগুলো ধরে রাখতে তারা আপাতত ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্প শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানেই তাদের টিকিট বিক্রি চালু রাখবে।

নওগাঁ বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার নিজস্ব পরিবহণ এসপি ট্রাভেল ফুড গার্ডেন হোটেলে দাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি। এ রকম সব গাড়ির মালিক পক্ষই এখন অন্য কোনো হোটেলের সঙ্গে কথা বলে সেখানে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করবে।

হোটেলটি বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে ঢাকায় যাওয়া পাবনার যাত্রীদের। পাবনার পর থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে এলেঙ্গার আগ পর্যন্ত তেমন কোনো ভালো মানের হোটেল না থাকায় পাবনার বাসগুলো কোথায় যাত্রাবিরতি দেবে তা এখনও বলতে পারছেন না বাস মালিকরা।

পাবনা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাল থেকে বাসগুলো কোথায় দাঁড়াবে তাও তারা জানাতে পারেননি।

এ বিষয়ে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবীর বলেন, হোটেল ফুড ভিলেজ বন্ধ হওয়ায় যানবাহন চলাচলে বা যানজট সৃষ্টির মতো কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিশেষ করে পাবনাগামী বা পাবনা থেকে ঢাকাগামী যে বাস এবং যাত্রীগুলো আছে তাদের জন্য একটা বড় সমস্যা হবে। তিনি বলেন, বগুড়া-ঢাকা রোডে কিছু ভালো হোটেল আছে। রাজশাহী রোডে খুব ভালো না থাকলেও কিছু হোটেল আছে। কিন্তু পাবনা রোডে যাত্রা বিরতি দেওয়ার মতো তেমন কোনো হোটেলই নেই। তাদের এলেঙ্গা বিরতি দিতে হবে। নয়তো একদম পাবনা যেতে হবে। এটা তাদের জন্য একটু কষ্টকর হবে।

পাবনা বাস মালিক সমিতির অফিস সচিব আমিনুল ইসলাম বাবলু বলেন, ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেলের সিনিয়র উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শাহজাহান রেজা সাগর বলেন, ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কারণে হোটেলটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাসে পাবনা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাই, কানসাট, নওগাঁ, পঞ্চগড়, নীলফামারীও বগুড়াসহ আরও কিছু জেলার বাস এখানে যাত্রা বিরতি নিত। আমরা এখনও অন্য কোথাও যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। কোথাও কোনো জায়গা এখনও পাওয়া যায়নি। বিষয়গুলো নিয়ে সাসেক প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। আমরা নলকা ব্রিজের আশপাশে ভালো কোনো জায়গা পেলে সেদিকে যেতে পারি।

সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ফুড ভিলেজ প্লাসকে ২ দশমিক ৬৭ একর জায়গা ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দুই মেয়াদে ৫ বছর করে মোট ১০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৮ সালে লিজ মূল্য ছিল ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪০ টাকা। ঢাকা অফিস থেকে তারা লিজ নেওয়ায় আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারবো না।তিনি বলেন, জায়গাটি নিয়ে তারা মামলা করায় আমরা তেমন কিছু করতেও পারছিলাম না। এখন ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পে জায়গাটি প্রয়োজন হওয়ায় সরকার অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করেছে। এখন সেখানে সাসেক তাদের প্রকল্পের কাজ শুরু করবে।