পেঁয়াজে আগুন লেগেছে

ভারতে শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে রাতারাতি সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। হঠাৎ সঙ্কটের অজুহাতে কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে দাম। এতে পুরোনো অজুহাত কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার কেজিতে শতক ছুঁয়েছে দেশি পেঁয়াজ। 

বাজারে কৃত্রিম এ সঙ্কটের পেছনে কলকাটি নাড়ছে ‘সিন্ডিকেট চক্র’। যে চক্রে আছে খুচরা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীরা। যে যেভাবে পারছে ভোক্তার পকেট কাটছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ দরকার এবার তার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত রেখে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়াচ্ছেন। সিন্ডিকেটের এই চক্রে রয়েছেন খুচরা থেকে বড় ব্যবসায়ী। তারা দাম বৃদ্ধির বিষয়ে একে অপরকে দোষারোপ করেন। এর মধ্যেই সবাই অবৈধ মুনাফা করে নিচ্ছেন।

সরকারের বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও একই চিত্র উঠে এসেছে। টিসিবির তথ্য মতে, ২১ আগস্ট রাজধানীতের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। যা এক মাস আগেও ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। তিন বছর আগের অর্থাৎ ২০২০ সালে এই দিনে দেশি পেঁয়াজের মূল্য ছিল ৩৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। আর আমদানি পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৫ টাকা। আর আমদানি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা।

গত শনিবার (১৯ আগস্ট) পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারত। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। ভারতের পেঁয়াজের ওপর আরোপিত নতুন এই শুল্ক চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। শনিবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এ বছর দেশীয় উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন আরও বেশি হয়েছে। তবু পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এর আগের বছর ২০২১-২২ অর্থ বছরের ২ দশমিক ৫৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। এতে উৎপাদন হয় ৩৬ দশমিক ৪১ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ।

ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০% শুল্ক আরোপ ও দেশের বাজারে হঠাৎ দাম বৃদ্ধির বিষয়ে গত রোববার (২০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের (সিডিবি) মিলনায়তনে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছি, দেশে এসেছে মাত্র তিন লাখ টন। এর অর্থ হলো দেশেও পেঁয়াজ আছে। মাঠ পর্যায়েও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশের কৃষকদের কাছে এখনো বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজের মজুত আছে। কাজেই, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০% শুল্ক আরোপ করলেও দেশে পেঁয়াজের দামে তেমন প্রভাব পড়বে না। শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এখন দাম কিছুটা বাড়লেও কয়েক দিন পর কমে আসবে। তুরস্ক, মিশর ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করা হবে।’