ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশের নির্ধারিত শর্ত না মানায় ফার্মেসি বিভাগের অনার্স কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)। এমন নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় পড়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা, বিব্রতকর পরিস্থিতিতে শিক্ষকেরা। তবে, নতুন বিশ^বিদ্যালয়ে নানা সীমাবদ্ধতাকে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী করে শর্ত পূরণে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার আশ^াস দিয়েছে পাবিপ্রবি প্রশাসন।
ফার্মেসি কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা চলতি বছর ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে ল্যাব সংকট, ল্যাবের যন্ত্রপাতি অকেজো, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানা কারণে পাবিপ্রবিসহ সরকারি ৪টি ও বেসরকারি ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের বি.ফার্স কোর্সের অ্যাক্রেডিটেশন নবায়ন স্থগিত করেছে। একই সাথে স্থগিতাদেশ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে শিক্ষার মান উন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বি.ফার্ম কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।
এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আগামী ৩১ অক্টোবর ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ বাস্তবায়নে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, শিক্ষক সংকট কাটানো, পাঁচটি ল্যাবরেটরি স্থাপন, প্রয়োজনীয় রাসায়নকি সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা রাখা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরী তৈরিসহ প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পাবিপ্রবিসহ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে সতর্কমূলক চিঠি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। এবার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চুড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ সময়সীমার পর ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়েছে।
মাহবুবুল হক আরো জানান, নির্দেশ অমান্যকারী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি ফার্মেসি অনার্স কোর্সে (বি.ফার্স) শিক্ষার্থী ভর্তি করে তাহলে সেসব শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন দেবে না কাউন্সিল। এমনকি শিক্ষার্থী পাস করার পর ‘পেশাগত সনদ দেওয়া হবে না’।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন পাবিপ্রবির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন শিক্ষকেরাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবিপ্রবির ফার্মেসী বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ল্যাব, রাসায়নিক উপকরণসহ প্রায় সবকিছুর আজন্ম সংকট নিয়ে চললেও পরিস্থিতি পরিবর্তনে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন কখনোই কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। আর্থিক সংকটের কথা বলা হলেও, সেটি একটি গতানুগতিক বুলি। গত পাঁচ বছরে বিশ^বিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ এসেছে কিন্তু আমাদের বিভাগে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে তা কাজে লাগানো হয়নি। ভর্তি পরীক্ষার সম্মানী হিসেবে তারা লাখ লাখ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন কিন্তু আমাদের ব্যপারে আর্থিক সংকট কাটেনি।
পাবিপ্রবি ফার্মেসি বিভাগ থেকে সদ্য বি.এস.সি পাশ করা শিক্ষার্থী শফিউল সুলতান সবুজ বলেন, ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের এই বিভাগে সাতটি ব্যাচের শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। তার যথেষ্ঠ আন্তরিক কিন্তু তাদের পক্ষে পুরো বিভাগ ব্যবস্থাপনা দুরূহ। এমনিতেই আমরা ব্যবহারিক শিক্ষায় অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয় থেকে পিছিয়ে থাকায় চাকুরীর বাজারে গুরুত্ব কম পাই। এখন নিষেধাজ্ঞার আওয়তায় এলে আমাদের দাঁড়ানোরও জায়গা থাকবে না। এমন সংকটের জন্য প্রশাসনের অবহেলা ও দায়িত্বহীন আচরণই দায়ী।
পাবিপ্রবি ফার্মেসি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শরিফুল হক বলেন, আমাদের বিভাগে শিক্ষক ও ল্যাব সংকট প্রকট। এ বিষয়ে প্রশাসনের উচিৎ দ্রুত উদ্যোগ নেয়া। কারণ এমন নিষেধাজ্ঞায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনে প্রভাব না পড়লেও, পাবিপ্রবির ফার্মেসি বিভাগের ভাবমূর্তি সংকট হবে। এতে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা পাবিপ্রবির ফার্মেসিতে ভর্তি হতে নিরুৎসাহিত হবেন। দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ও ল্যাব প্রতিষ্ঠার দাবীও জানান তিনি।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, নতুন বিশ^বিদ্যালয়গুলিতে প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত না করেই বিভিন্ন বিভাগ খোলা হয়েছে। এটি কেবল আমাদের নয় নতুন সকল বিশ^বিদ্যালয়ের একই সংকট। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ে এসব সংকট কাটিয়ে ওঠার। ৩১ ডিসেম্বরের ফার্মেসি কাউন্সিলের শর্ত পূরণ করা কঠিন, তারপরেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।