পাবনা জেলা আ.লীগ সভাপতি সম্পাদকসহ ১০৩ নেতাকর্মীর নামে মামলা

পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিতে তিন ছাত্র নিহত হবার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে ঘটানায় নিহত পাবনা পলিটেকনিক ইনিষ্টিটিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলামের (১৮) বাবা মো. দুলাল উদ্দিন বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলায় পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, সাধারণ সম্পাদক সদর আসনের সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পৌর মেয়র শরিফ উদ্দিনসহ আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শীর্ষ ১০৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আরো অনেক আসামী করা হয়েছে।
এছাড়া ছাত্রদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেবার অভিযোগে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে প্রধান আসামী করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদীর দাবি, ঘটনার দিন ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিল। এ সময় মামলার অভিযুক্ত আসামীরা লোহার রড, বাঁশের লাঠি ও দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে। বিনা উস্কানিতে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে ছাত্র জনতা ভয়ে দিকবিদিক ছুটতে থাকে। এ সময় তাঁর ছেলে জাহিদুলসহ ছাত্ররা আন্দোলনরত অবস্থায় ছিল। এর এক পর্যায়ে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের লক্ষ্য করে দুইজন গুলি চালাতে শুরু করে। এতে তাঁর ছেলে সহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। পরে তাঁদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, রাতে বাদী থানায় হাজির হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। আমরা মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছি। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিহত হওয়া দুঃখজনক জানিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য বিদায়ী সাংসদ গোলাম ফারুক প্রিন্স একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

 

বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে আমাদের কোন অবস্থান ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম ছাত্রদের ন্যয্য দাবী প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সুযোগ সন্ধানীরা যেন পাবনায় কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে। ৩ আগষ্ট থেকে সুযোগসন্ধানী ছাত্র শিবিরকর্মীরা ছাত্রদের মধ্যে প্রবেশ করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। আমরা জানতে পারি তারা ছাত্রদের লাশ চায়। ৪ আগষ্ট পরিকল্পিত নাশকতা করতে ছাত্রশিবির কর্মীরা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সামনে থেকে ছাত্রদের বিভ্রান্ত করে মধ্য শহরে নিয়ে আসে।

তারা ছাত্রদের উত্তেজিত কওে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় বুলবুল কলেজ সড়ক ও থানা সড়কে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে দুই ছাত্রসহ তিনজন নিহত হয়। এরপর প্রায় তিন ঘন্টা পর ছাত্র জনতাকে উত্তেজিত করে সশস্ত্র শিবির কর্মীরা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও আওয়ামীলীগ অফিস ভাঙচুরের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশও নেতাকর্মীদের রক্ষায় ব্যার্থ হয়। পরে আত্মরক্ষায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁদের লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।