পাবনার মানুষ বঞ্চিত : রাষ্ট্রপতি

পাবনার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, আমার কোনো দায় (পাবনার উন্নয়নে) নেই, আমি পাবনার মানুষ, পাবনার সন্তান, পাবনায় জন্মগ্রহণ করছি। পাবনার মানুষ এত বঞ্চিত। এগুলো বিবেকের তাড়নায় করতে হয় এবং করাটা আমার দায়িত্ব।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে পাবনা সার্কিট হাউসে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি পাস হওয়া পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সবাইকে আমি ডেকে যখন বললাম, তখন সকলেই বিস্মিত হলো। তার মানে কী? সোজা কথা হলো যে আপনারা যাদের জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন আশা এবং আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে সচিবালয়সহ জায়গায় জায়গায় উত্থাপনই করেনি। কারও নলেজেই নেই। তারা বিস্মিত হওয়ার পরে বললাম, রিয়েল ফ্যাক্ট। ২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এটা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি।

পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, পাবনায় মেডিকেল কলেজ আছে, হাসপাতাল নেই। সকলেই বিস্মিত হয়। কিন্তু আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আপনারা যাদের জনপ্রতিনিধি বানিয়েছেন তারা এ বিষয় নিয়ে সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট জায়গায় গিয়ে কখনো কথা বলেনি, এমনকি উত্থাপনই করেনি। বিষয়টি কারও নলেজেই নেই। ২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এটা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে এটা ডেট কেস, এটা হওয়ার মতো নয়।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন সচিব ও সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলার মাধ্যমে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস করা হয়েছে। একনেকে পাস হওয়ার পর ৩০ জন ভিক্ষুককে খাওয়ানোর জন্য মানত করেছিলাম। কেউ কেউ বলে যারা এতদিন এই বিষয়টি উত্থাপনই করেনি তারা বলে, হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নাকি কী স্থাপন হবি, ওখানে গিয়ে কী হবি? এমনিই হইতো, ওমনিই হয়তো। মানে লোকজন যাতে ওখানে না আসে, এ রকম একটা নেগেটিভ পাবলিসিটি হয়েছে। যারা ব্যর্থ তারা তো এটা করবেই।

ঢাকা-পাবনা রুটে ট্রেন চালুর অগ্রগতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, রেলমন্ত্রী ও সচিব স্বাক্ষরের পর এটি চূড়ান্তভাবে পাস হতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এটি আরেকটু যাচাই করতে বলেছেন যে, এটি হলে সরকার কতটুকু লাভবান হবে। তিনি এটা করতেই পারেন। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন এটি খুব শিগগিরই হবে। এখন কেউ এটা নিয়ে সমালোচনা করতেই পারেন। নাও করতে পারেন। এটা তার হৃদয়ের উদারতা। আমার যতটুকু করার ততটুকু করছি। আমি যে সেপ্টেম্বর বলে দিলাম আর সেপ্টেম্বরে হয়ে গেল এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। আমার বলার প্রেক্ষাপটটা একটু বিবেচনা করবেন। সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া- এটা হয় না। কোনো সময় হয়ে যায়, কোনো সময় হয় না।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ঘোষণা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে পাবনা থেকে ঢাকা সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। এবার সেই কারণ জানালেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘সরকার তো ক্ষমতায় এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়, পাঁচ বছরের মধ্যে কি সেই সব প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে? কিছু পারে, কিছু পারে না। তাই আমি যে সেপ্টেম্বরে পাবনা থেকে ঢাকা ট্রেন চলাচল উদ্বোধন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেটা যে সেপ্টেম্বরেই হবে এটা ভাবার সুযোগ নেই। সবকিছু নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে হয় না। কোনো সময় হয়ে যায়, কোনো সময় হয় না।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সেদিন প্রথমবার পাবনায় এসে তাড়াহুড়ো করে বলেছিলাম সেপ্টেম্বরেই পাবনা থেকে ঢাকা ট্রেন চলবে। কিন্তু ট্রেন চালু হলো না কেন তার পেছনে প্রেক্ষাপট রয়েছে। এখানেও অনেকেই প্রশ্ন করছে, সেপ্টেম্বর মাস তো আইসে গেল, কামতো কিছু দেহি না। অনেকেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। কিন্তু আমি তো এদিকে লেগে আছি। ট্রেন চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মত দিয়েছেন যে, পাবনা থেকে ঢাকা ট্রেন চললে সরকারের বা রেল বিভাগের কী লাভ আছে এটা একটু যাচাই করা দরকার। এটা সরকারপ্রধান যাচাই করতে বলতেই পারেন। তিনি সন্তুষ্ট হতে চান। তিনি রেল কর্তৃপক্ষকে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করতে বলেছেন। রেল কর্তৃপক্ষও সেগুলো নিয়ে কাজ করছে। তাই আপাতত ট্রেন চালু না হলেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এখন এই পর্যায়ে আছে। কেউ এটা নিয়ে সমালোচনা করতেও পারে, নাও করতে পারে। আমি যতটুকু করার ততটুকু করছি।’

ইছামতি নদীর সৌন্দর্যবর্ধন এবং খনন কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এসব কাজ করে আমার তো পাঁচ পয়সা লাভ নেই। আমি করবো পাবনার মানুষের জন্য। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমার দায়বদ্ধতা থেকে এগুলো করি। করার দায়িত্ব মনে করি। যারা আপনাদের দ্বারা নির্বাচিত তারা কী করলেন, না করলেন এটা আমার দেখার দরকার নেই। পাবনার মানুষ হিসেবে একটা দায়িত্ববোধ থেকে আমি পাবনার উন্নয়নে কাজ করে যাব।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা আমাকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন আগাগোড়াই। আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। আপনারা তো জানেন, পাবনা থেকে এখন ঢাকায় প্রায় স্থায়ী হয়ে গেছি। কিন্তু পাবনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকত। আমি তো আসতাম সব সময়, নিজের বাসভবনে আসতাম। সকলের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হত। প্রেসক্লাবে তো আমি অন্তত একবার হলেও যেতাম এবং সকলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতাম। খুবই ভালো লাগত। এবার তাড়াহুড়োর মধ্যে পাবনায় এসেছি, তাই আর প্রেসক্লাবে যাওয়া হলো না।’