পাবনায় নৌকা বাইচ দেখতে গিয়ে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ শিশুর লাশ ভেসে উঠলো নদীতে

পাবনার সদর উপজেলায় নৌকাবাইচ দেখতে গিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হয় স্কুল পড়ুয়া এক শিশু। ঘটনার পর থেকে খোঁজাখুঁজি করা হলেও দীর্ঘ রাত অবধিও মেলে না তার সন্ধান। পরে ওই দিন রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থলের পাশেই মরদেহ ভেসে উঠলে তা উদ্ধার করা হয়। গতকাল বুধবার বিকেল ৬ টার দিকে উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম বলরামপুর এলাকায় পদ্মার শাখা নদীতে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

নিহত শিশু উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের রনি খাঁ-এর ছেলে মেহেদি হাসান (১২)। সে বলরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুটি মাছ ধরা ছোট নৌকা পাশাপাশি বেধে তার ওপর উঁচু করে মাচা করে দেয়া হয় এবং তাতে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নদীতে ঘুরানো হচ্ছিলো। নৌকা দুটির মাঝি ছিলো মেলা এলাকার মোহাম্মদ মাঝি। ওই নৌকায় ওই ছেলেটিকে উঠতে দেখে অনেকেই। মাচার ওপরে এবং নিচে উভয় ঘরেই লোকে ঠাসা ছিলো। ওপরে লোকগুলো যখন বেশি নড়ে ওঠে তখন নৌকা কাত হয়ে ডুবে যায়। নৌকার প্রায় ৩৫/৪০ জন মানুষই কোনো না কোনোভাবে উঠে আসতে পারলেও সাঁতার না জানায় ওই ছেলেটি উঠতে পারেনি। নৌকাডুবির ঘটনা মেলা থেকে নদীর এক থেকে দেড় কিলোমিটার ভেতরে হওয়ায় সেখানে গিয়ে তাকে কেউ তুলতেও পারেনি। পরে তার মরদ্রহ ভেসে উঠে।

 

মেলার নৌকা ব্যবসায়ী আক্কাজ মাঝি জানান, দুটি নৌকা ওভাবে যুক্ত করা এবং লোক উঠানো দারুণ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার বলে আমরা অন্যান্য মাঝিরা আলাপ করছিলাম। ব্যাপারটি ওই মাঝিকে জানানোও হয়। এরই মাঝে মেলা থেকে নদীর কিলো দেড়েক ভেতরে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। ডুবার পর ওই ছেলেটিকে আর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসে কল দিলে ডুবুরি দল না থাকায় পরদিন সকালে আসবেন জানায়। পরে মধ্যরাতে তার লাশ ভেসে ওঠে।

 

আরেক মাঝি নাজমুল জানান, শুরু থেকেই নৌকা খুব দুলছিলো। নৌকার মাচার ওপরের লোকগুলো যখন আরেকটু বেশি নড়াচড়া করেছে তখনই নৌকাটি ডুবেছে। কয়েকটা বাচ্চাও ছিলো নৌকাতে। তাদের গার্জিয়ানরা নিজেদের বাচ্চাকে কোনোভাবে উদ্ধার করে এনেছে। কিন্তু ওই ছেলের খবর কেউ নেবার সুযোগই পায়নি।

 

নিখোঁজের বাবা রনি খাঁ জানান, দুপুরে জমি থেকে বেগুন তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ১শ টাকা পেয়েছিলো মেহেদি। মা কে জানায় এই টাকা সে দেবে না, এটি দিয়ে নাদেরর নৌকা বাইচ মেলায় যাবে। এরপর দুপুরের দিকে মেলায় গিয়ে ঘুরাফেরার পর সাড়ে ৫টার পর ওই নৌকায় উঠতে দেখেছে বলে স্বজনরা তাকে জানায়। এরপরই নৌকাডুবির খবর আসে এবং তার ছেলে নিখোঁজ হয়। পরে মধ্যরাতে ছেলের লাশ ঘটনাস্থলের পাশেই ভেসে উঠলে তা উদ্ধার করে দাফন করতে হয়েছে। নৌকায় যাত্রী তোলা ও পরিচালনায় অব্যবস্থাপনার কারণে আমাকে একমাত্র ছেলেকে হারাতে হলো।