দেশের অন্যতম পাট উৎপাদনকারী জেলা পাবনায় ফলন ভালো হলেও কৃষকরা খুশি হতে পারছেন না পাটের বাজারে দরপতনের কারণে। মৌসুমের শুরুতেই পাটের দাম মণ প্রতি হাজার টাকা কমে যাওয়ায় আপাতত হতাশ পাট চাষিরা। তাদের দাবি, যত শিগগির সম্ভব পাটের দাম আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার নির্ধারিত মূল্য ঠিক করে দেয়ারও দাবি চাষিদের।
পাট চাষিরা জানান, এবার পাটের ফলন ভালো হলেও পানির অভাবে পাট পঁচানো নিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। সম্প্রতি হালকা বৃষ্টি হওয়ায় কিছু কিছু এলাকার খাল-বিলে স্বল্প পানির দেখা মিললেও যে পরিমাণ পাটের আবাদ হয়েছে তা পঁচাতে পর্যাপ্ত নয়। নিকটের খাল বা জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দূরে বয়ে নিতে পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় গুনতে হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তার বিপরীতে পাটের বাজার দর তেমন সন্তোষজনক নয়। চাষিরা আরো জানান, প্রতি আটি পাট ৪ থেকে ৫ টাকা করে পঁচানো খরচ, শ্রমিক ও বীজের মূল্য সংক্রান্ত ব্যয়সহ এবার বিঘা প্রতি প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পাটের বর্তমান বাজার মণ প্রতি ২৪ থেকে ২৫শ টাকা। এক বিঘায় সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ মণ পাটের আঁশ পাওয়া যায়। এগুলো বিক্রি করে নীট খরচই হয়তো উঠবে, লাভ তো দূরে থাক নিজেদের শ্রমের মূল্যও মিলবে না। এমন অবস্থায় চাষিদের দাবি পাটের বাজার মূল্য বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিংয়ের।
পাবনা গয়েশপুর ইউনিয়নের ইসলামপুরের চাষি আব্দুল আওয়াল বলেন, এই যে পঁচা পানিতে সারাদিন পাট জাগ দেয়া থেকে ধোঁয়ার কাজ করছি এই শ্রম বৃথা। কেবল খরচই হয়তো এ থেকে উঠবে। যারা পাটের সকল কাজই লেবার নিয়ে করাচ্ছে তাদের বরং লোকসান হবে।
বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক নাজমুল ইসলাম। তিনি এবার সাত বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। শুরুতে আশেপাশের খাল বা নালায় পানি না থাকায় সেচ পাম্পে পানি উঠিয়ে পাট জাগ দিয়েছেন। স¤প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় পানি সংকট কমলেও যা ব্যয় দাঁড়িয়েছে তা উঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। তিনি বলেন, সেচ দিয়ে শুরুতে পাট পঁচানোর পানি সংকট মেটাতে হয়েছে। এত অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে। পাটের যা দাম কতটুকু উঠবে কে জানে। বাজার দর যদি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা হতো তাহলে লাভবান হওয়া সম্ভব ছিলো।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার মোট ৪৫ হাজার ২শ ৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৫ হাজার হেক্টর আবাদের। এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাহলেও গত বছর ৪৫ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিলো। এর আগের এর আবা আরো বেশি ছিলো।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন বলেন, আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। শুরুর দিকে দাম একটু কম থাকে। পরে কিন্তু বাজার দর খানেকটা বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে ভালো দাম পেলে কৃষকেরা লাভবান হতে পারবেন।