ঠিকাদারি কাজ নিয়ে হাতাহাতি, ফের উত্তপ্ত গণপূর্ত বিভাগ

পাবনায় ঠিকাদারী কাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে আবারো পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে হুমকী ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবলীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সদস্য শেখ লালুর বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে পাবনা গণপূর্ত বিভাগ ক্যম্পাসে ও নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।

তবে এ ঘটনাকে নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন অভিযুক্ত শেখ লালু। তিনি দাবী করেন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ঠিকাদার ও তার লোকজন পরিকল্পিত ভাবে তাকে মারধোর করেছে।

 

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বেলা পৌনে একটার দিকে শেখ লালু তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে আমরা কক্ষে আসেন। তিনি কোন কথা বার্তা ছাড়াই অকথ্য গালিগালাজ শুরু করেন। নিজের প্রভাব ও ক্ষমতার কথা জানিয়ে আগামীতে বড় কাজ না দিলে অফিসে আসতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন। এ সময় আমি অনৈতিক প্রক্রিয়ায় কাজ দেয়া সম্ভব না জানালে মারমুখী আচরণ করে। পরে, অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী ও কাজে আসা ঠিকাদারেরা তাকে বের করে নিয়ে যান। পরে পুলিশ ও র‍্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় আমি ভীত নই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

ঘটনার সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে আলাপরত ছিলেন ঠিকাদার তুষার হোসেন। তিনি জানান, আমরা একটি বকেয়া বিলের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সাথে আলাপ করছিলাম। এ সময় হঠাৎ শেখ লালু, লারা, জাহিদসহ ছয় সাতজনের একটি দল নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কক্ষে এসে ধমকাতে শুরু করে। তারা প্রভাবশালী এক ব্যক্তির অনুসারী দাবি করে ঠিকাদারী কাজ কেন দেয়া হচ্ছে না বলে গালিগালাজ করে। এ সময় লালু দম্ভের সাথে বলেন, কাজ না দিলে ফলাফল ভয়াবহ হবে। আগে পাঁচটা এক্সেন খাইছি । তোরেও খাইতে সময় লাগবে না। এমপি ডিআইজি কাউকে বলেই লাভ হবে না। এ সময় আমরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের উপর চড়াও হয়। বাইরে নিয়ে মারধোর করে। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই সব জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

 

 

ঠিকাদার তুষার আরো বলেন, শেখ লালুর গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারী লাইসেন্স নেই। সে এর আগেও গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেছে। এভাবে চলতে থাকলে, পেশাদার ঠিকাদারদের এখানে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

গণপূর্ত বিভাগ পাবনার প্রধান সহকারী আব্দুস সালাম জানান, দুপুরে হঠাৎ করেই ঠিকাদার তুষার ও শেখ লালু গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। সে সময় অফিসে থাকা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। স্যারের কক্ষে কি হয়েছে তা আমার জানা নাই।

এদিকে ঠিকাদার শেখ লালুর সহকারী বলেন, গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারী কাজ তিনজন নিয়ন্ত্রন করেন। এই তিনজন ছাড়া আর কেউই কাজ পাননা। তাই তিনি এর প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার তুষারের লোকজন তাকে বদম ভাবে মারপিট করে মারাত্মক আহ করে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।

 

তিনি আরো জানান, এই নির্বাহী প্রকৌশলী এই কর্মস্থলে যোগদানের পর যতগুলো কাজ বের হয়েছে, সে সব কাজ কে বা কারা করেছে তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে সকল তথ্য।

অভিযুক্ত ঠিকাদার শেখ লালুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল সব কাজে পক্ষপাতিত্ব করেন। একজন নিয়মিত ঠিকাদার হিসেবে পাবনা গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে গিয়েছিলাম। তিনি আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এসময় নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে তার পছন্দের ঠিকাদার তুষার আমার সাথে থাকা লোকজনের উপর হামলা করে। আমরা কাউকে মারপিট করিনি। বরং অনিয়মের প্রতিবাদ করে লাঞ্ছিত হয়েছি।

 

পাবনা জেলা পুলিশ গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমরান মাহমুদ তুহিন জানান, পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি। এলাকার নিরপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিষয়টি পুুলিশ সুপার স্যার তদারকি করছেন।

পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী জানান, গণপূর্ত দপ্তর থেকে খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ফোর্স পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ ধরণের ঘটনাকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে ২০২১ সালের ০৬ জুন শেখ লালু, হাজী ফারুকসহ কয়েকজন আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতা পবনা গণপূর্ত অফিসে ঠিকাদারী কাজে প্রভাব বিস্তার করতে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। সে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে জেলা প্রশাসন। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যহতি দেয় জেলা যুবলীগ।