পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার বাবুপাড়া এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া (১৫)। বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবে। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সেই হারিয়েছেন বাবাকে। এরপর মা একাই শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। অদম্য মেধাবী এই শিক্ষার্থী সব শ্রেণিতে ভালো ফল করে চলেছে। তবে দিন দিন খরচ বাড়তে থাকায় সাদিয়ার মায়ের পক্ষে পড়ালেখার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে টাকার কাছে হার মেনে বাবার স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে সাদিয়ার।
সাদিয়ার মা জানান, ২০১৭ সালে ঈশ্বরদী রেলগেট এলাকার গ্রিন জুয়েলস কিন্ডারগার্টেন থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে সাদিয়া। খরচ কুলাতে না পেরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর সাদিয়াকে জামালপুরের সরিষাবাড়ি ফুপুর বাসায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে থেকেই পড়াশোনা করে সে। ২০২০ সালে চিলড্রেনস হোম পাবলিক স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে সে। সর্বশেষে ২০২৩ সালে একই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করে গোল্ডেন জিপিএ-৫। এর পরই বাধে বিপত্তি। এতদিন কম খরচে পড়াশোনার খরচ চালানো গেলেও ভবিষ্যতের দিনগুলোতে পড়াশোনা করানো সম্ভব হবে কি না, দুশ্চিন্তায় সাদিয়া ও তার মা।
এসব বিষয়ে সাদিয়ার বড় বোন বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৪ বছর তখন আমার বাবা মারা যায়। আমার বাবা বলতেন আমার ছোট মেয়েকে ডাক্তার বানাব। কিন্তু ডাক্তার বানানোর ইচ্ছে থাকলেও বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ইচ্ছে পূরণে আমার মা অনেক চেষ্টা করেছে। তবে এখন আমার মায়ের পক্ষেও কষ্টকর হয়ে পড়েছে জীবিকা নির্বাহ করা। আমি ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ নিজে চালিয়ে নিলেও আমার ছোট বোনকে দিয়ে তো এসব করানো যাচ্ছে না। তার পড়াশোনায় ক্ষতি হবে। এখন কী করব কিছু ভেবে পাচ্ছি না।’
আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুর রহমান বিরু বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের সঙ্গে সাদিয়ার ব্যাপারে কথা বলব। তারা যেন সাদিয়ার পাশে দাঁড়ান। সাদিয়ার মতো একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর যদি পড়াশোনা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক।’
সাদিয়ার পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস। তিনি বলেন, যেহেতু সাদিয়া একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, তার মতো শিক্ষার্থী দেশ ও দশের উপকারে আসবে। আমি কথা দিলাম, সাদিয়ার পাশে থাকব। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পড়াশোনা যাতে চালিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা আমি করব।’