নিজস্ব প্রতিনিধি:
ভূয়া কমিটি ও জাল রেজুলেশনে টাকায় শিক্ষক নিয়োগ সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাবনার বেড়া উপজেলার পাচুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার শাখাওয়াত হোসেন বেলালীর বিরুদ্ধে। একাধিক তদন্তে এসব অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় সাতদিনের মধ্যে জবাব চেয়ে চিঠি দেন ইউএনও। এবার সেই চিঠিকেও উপেক্ষা করেছেন তিনি। এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
নথি বলছে, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের প্রমাণ মেলায় গত ৪ ডিসেম্বর এর জবাব চেয়ে মাদ্রাসা সুপারকে চিঠি দেন বেড়া ইউএনও। এতে সাতদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। চিঠিতে বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর জালিয়াতি ও বিধি লঙ্ঘন করে মাদ্রাসায় জুনিয়র শিক্ষিকা (এবতেদায়ী) পদে নিয়োগের অভিযোগ আসে মাদ্রাসা সুপার শাখাওয়াত হোসেন বেলালীর বিরুদ্ধে। এঘটনা তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। এ অবস্থায় কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সাতদিনের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু মেয়াদের তিন সপ্তাহ অতিক্রম করলেও তার জবাব দেননি অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপার। তার বিরুদ্ধে এখনো নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থাও।
এব্যাপারে বেড়া ইউএনও মোরশেদুল ইসলাম জানান, অভিযোগের সত্যতা মেলায় সবশেষ তাকে শোকজ করা হয়েছে। এর জবাব মনে হয় তিনি দেন নাই। তবে বিষয়টি আইনগত প্রক্রিয়ায়ই এগুবে। জবাব সন্তোষজনক নাহলে দ্রুতই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় দীর্ঘসূত্রিতায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের দাবি, এতোদিন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় মাদ্রাসা পরিচালনা করেছেন সুপার। মোটা অংকের টাকায় কমিটি জালিয়াতি করে শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়েছেন। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এতো কাল বিলম্ব হবে? এসময় দ্রুত দুর্নীতিবাজ সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এব্যাপারে অভিযোগকারী সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আ. মান্নান বলেন, আমাকে সদস্য দেখিয়ে জাল কমিটি করে নিয়োগ দেন। এতে আমার দায়ের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করি ও শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেই। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের দিন আমাকে মাদ্রাসায় ডাকলে সবার সামনে আমাকে লোক দিয়ে আমাকে মারধর করান সুপার। এবার তার বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
তিনি বলেন, এটিই শেষ নয়। ইউএনও’র সই জাল করে শিক্ষকদের টাকা মেরে দেয়া সহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এছাড়া আমার ছোটভাইকে চাকরি দেবার নামে মাদ্রাসা সুপার মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। চাকরি দেন নাই, টাকাও মেরে দিয়েছেন। এসবেরও তদন্ত হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি মাদ্রাসার এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক পদে মিনা খাতুন নামে এক নারী শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেয় মাদ্রাসা সুপার শাখাওয়াত হোসেন বিলালী। মাদ্রাসা নিয়োগ বিধি অনুযায়ী অনুমোদিত নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি ব্যতীত নিয়োগ প্রদানে বিধিনিষেধ থাকায় এডহক কমিটি চলমান থাকলেও ভূয়া নিয়মিত কমিটি দেখিয়ে এ নিয়োগ সম্পন্ন করেন তিনি। তথ্য গোপন করে এ শিক্ষিকার বেতন ভাতা উত্তোলনের ব্যবস্থাও করেন। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পছন্দের লোককে নিয়োগ দিতে কাউকে না জানিয়েই তিনি এমন অনিয়ম করেছেন। জেলা শিক্ষা অফিসে আরেকটি অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি বেড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজারকে দিয়ে তদন্ত করায় শিক্ষা অফিস। এতে তার নিয়োগ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে জানিয়ে গত ১৪ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। টাকায় নিয়োগের ঘটনা এটিই শেষ নয়। সম্প্রতি স্থানীয় ইউপি সদস্য মান্নান মেম্বারের ছোটভাইকে চাকরি দেবার নামে তার থেকে মাদ্রাসা সুপার হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের অর্থ। চাকুরী না দিয়ে পতনের আগে আ.লীগের প্রভাব এবং সবশেষ জামায়াতে ইসলামীর নেতা পরিচয়ের প্রভাব দেখিয়ে তিনি এ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ মান্নান মেম্বারের।
এছাড়া কয়েক বছর আগে তৎকালীন ইউএনও এর স্বাক্ষর জাল করে গোপনে শিক্ষকদের টিউশন ফি এর টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন মাদ্রাসার এ সুপার। এ নিয়ে মামলা হয়েছিলো, তদন্তও হয়েছিলো। এঘটনাসহ নানা কারণে উনি বরখাস্তও হন। পরে শিক্ষকদের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে শিক্ষকরা তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। এরপরও সুপার সেই টাকা আত্মাসাৎ করেন। এছাড়া এর আগে তার গ্রামে নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের জেরে বিচার সালিসে তাকে জরিমানা করা হয়েছিলো বলেও অভিযোগ শিক্ষক ও স্থানীয়দের।