জাপানে লেকের পানিতে পড়ে যাওয়া সহকর্মীর দুই সন্তানকে উদ্ধারের পর নিজেই তলিয়ে গিয়ে মারা গেছেন পাবনার এক প্রবাসী যুবক। গতকাল রোববার জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে সিজুওকা প্রিফিকসার লেকে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ব্যক্তির নাম—খাইরুল কবির (৩৮)। তিনি জাপানের রেকুটেন নামের একটি কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
খাইরুল পাবনা শহরের শালগাড়িয়া রেনেসাঁ পাঠাগার এলাকার সাবেক মিলিটারি অ্যাকাউন্টস অফিসার মরহুম আবুল কাশেম শিকদারের দ্বিতীয় ছেলে। খাইরুল পাবিপ্রবির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য প্রফেসর আমিন উদ্দিন মৃধার ভাগনে এবং দৈনিক যুগান্তর ও চ্যানেল আইয়ের পাবনা প্রতিনিধি আখতারুজ্জামান আখতারের মামাতো ভাই।
খাইরুল কবিরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, খাইরুল কবির ৭ বছর আগে জাপানের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি রেকুটেনের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সপরিবারে টোকিওর মাসিদাতে বসবাস করতেন। রোববার সকালে জাপান প্রবাসী বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন এবং কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে সপরিবারে বেড়াতে যান সিজুওয়াকা প্রিফিকসার লেকে। এই লেকটি একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্ত হয়েছে।
রোববার আনুমানিক বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় খাইরুল কবিরের দুজন বন্ধু ও সহকর্মীর দুই কিশোর ছেলে ওই লেকের পানিতে পড়ে যায়। তাদের তলিয়ে যাওয়া দেখে খাইরুল কবির দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই ছেলে দুটিকে লেকের পানি থেকে টেনে তুলে প্রাণ বাঁচান। কিন্তু দুই কিশোর প্রাণে বাঁচলেও খাইরুল আর উঠে আসতে পারেননি। তিনি দ্রুতই গভীর পানিতে তলিয়ে যান। এ সময় তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ সহকর্মীরা পাড়েই ছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁকে উদ্ধার করতে পারেননি।
পরে খবর পেয়ে সেখানকার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা ৩ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে। এরপর সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খাইরুলের মরদেহ বর্তমানে ইয়ামানাসী প্রিফেকচারের একটি হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।
খাইরুলের স্ত্রী মিতু বলেন, ‘সহকর্মীর ২ সন্তানকে উদ্ধারের পর আমাদের চোখের সামনেই খাইরুল গভীর পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের দুই শিশু সন্তানও বাবার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। লেকের পাড় থেকে তাদের সরানো যাচ্ছে না। আমি এখন কীভাবে ওদের সান্ত্বনা দেব।’
জাপান প্রবাসী খাইরুলের স্বজন শান্তা খাতুন জানান, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর অকালে চলে যাওয়ায় সেখানে এক বেদনাদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
এ দিকে পাবনা শহরের শালগাড়িয়া ও গ্রামের বাড়ি বেড়া উপজেলার দাঁতিয়া শিকদার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খাইরুলের মা শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীরাও খাইরুলের অকাল মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েছেন।