ছাত্র আন্দোলনের কবলে পড়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা

ছাত্র আন্দোলনের কবলে পড়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা। শেষ সময়ে এসে গাছেই নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ আম। চাষিরা বলছেন, শেষ সময়ে তারা যে লাভের আশা করছিলেন সেটা সম্ভব হয়নি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। অনেকেরই গাছে নষ্ট হয়েছে ফজলি আম। আবার গাছে আম পেকে নষ্ট হওয়ায় অনেকে স্থানীয় বাজারে নামমাত্র দামে পাকা আম বিক্রি করে দিয়েছেন।

রাজশাহীর পবা এলাকার আমচাষি জিয়াউর রহমান বলেন, এ বছর গাছে যে আম ছিল তাতে এমনিতেই চাষিদের মন ভালো ছিল না। তবে দাম অন্যবারের তুলনায় কিছুটা বেশি পাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছিলাম। শেষ সময়ে ফজলি এবং আম্রপলি আমের দামটা ভালো পাওয়া গেলো না। ১৫-২০ ভাগ আম গাছে থাকতেই ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। প্রথম দিকে তাদের শাটডাউনের কারণে রাজশাহী থেকে বাইরের জেলায় আম পাঠানো যায়নি। এরপর কারিফিউয়ের কারণে বন্ধ। সব মিলিয়ে ৫-৬ দিনে চাষিদের মাথায় হাত।

রাজশাহীর শালবাগান এলাকার আম ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন আমের বিদায় বেলা। গাছে ফজলি আম এখন প্রায় শেষ। কিছু গাছে আম্রপালি আছে। আর এর পরে আশ্বিনা পাকলে আমের এবারের মতো বিদায়। ৪-৫ দিন ধরে ব্যবসা নেই। অনেক গাছেই আম পেকে পড়ে নষ্ট হয়েছে, এ কারণে ক্রেতা নেই। রাজশাহী থেকে প্রতিদিনই কুরিয়ার এবং ট্রাকযোগে বিপুল পরিমাণ আম যায়। এগুলো কয়েকদিন ধরে বন্ধ। হাজার হাজার মণ আম গেলো না। এই আমের অনেকগুলোই পেকে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক বাগান মালিক স্থানীয় বাজারে ৩০-৪০ টাকা কেজি করে আম বিক্রি করেছে। আবার কারো কারো গাছেই আম নষ্ট হয়েছে। অথচ এই সময়ে ফজলির দাম ১০০ টাকা কেজি থাকার কথা। আজ-কালের মধ্যে যদি আবারো যানবাহন চলাচল শুরু হয় তাহলে হয়তো ফজলির একেবারে শেষ সময়ের কিছু আম বাইরে পাঠানো সম্ভব হবে।

রাজশাহী ফ্রুটস প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, আম এমন একটা জিনিস যেটা পেকে গেলে আর ধরে রাখার সুযোগ নাই। গত ৪-৫ দিনে পেকে নষ্ট হয়েছে অনেক আম।

তিনি বলেন, এবার আমের উৎপাদন কম। কিন্তু যেভাবে ক্রয়-বিক্রয় ও বাজারজাত হচ্ছিল সেভাবে শেষ করতে পারলে চাষিরা খুশিই হতেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে ঝমেলা হয়ে গেলো। এখনো যাদের গাছে আম রয়েছে তারা চরম মন খারাপের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে ফজলি আমের বাজার একেবারেই নষ্ট হয়ে গেলো। ৪-৫ দিন আগে প্রতিমণ ফজলি আম বিক্রি হচ্ছিল ২ হাজার বা ২২শ টাকায়। এটি প্রতিদিনই দাম বাড়ার দিকে যায়। কিন্তু গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় বাইরের জেলায় আম পাঠানো যায়নি। যাদের গাছে আম আছে তারা চেষ্টা করছেন না পেড়ে যে কদিন গাছেই রাখা যায়। কারণ পাড়লেওতো দাম পাচ্ছেন না। আবার গাছেও থাকছে না। ঝরে পড়ছে। এরইমাঝে হতাশা নিয়ে চেয়ে থাকা আরকি। যান চলাচল শুরু হলে হয়তো কিছুটা স্বস্তি মিলবে।