ছাত্রলীগ জড়িত বলেই তদন্তে গড়িমসি পাবিপ্রবি প্রশাসনের

২৩ জুলাই (রোববার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় পাবিপ্রবি প্রেসক্লাবে যুগ্ম-আহবায়ক ও দৈনিক নয়া শতাব্দীর পাবিপ্রবি প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক ঐদিন রাতে পাবনা সদর থানায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মাসুদ রানা সরকার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম প্রান্ত, সাবেক প্রচার সম্পাদক ইকরামুল ইসলাম সাগর, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম হৃদয়, ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ হোসেন সহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগের সূত্র ধরে গত ২৫ জুলাই (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামাল হোসনকে আহ্বায়ক ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রতন কুমার পালকে সদস্য সচিব করে পাঁচ (০৫) সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটি গঠনের পর কমিটির আহ্বায়ক প্রক্টর ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন পেশ করার আশ্বাস দেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে ২৮ জুলাই (শুক্রবার) তদন্ত কাজে অগ্রগতির বিষয়ে প্রক্টরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বুধবার আমাদের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা একটা মিটিং করেছি। আরো দুটি মিটিং করে যারা ভুক্তভোগী এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের সাক্ষাৎকার নেবো। এরপর আগামী মঙ্গলবার (১ আগস্ট) আমাদের এই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। কিন্তু ভুক্তভোগী সাংবাদিক বলছেন তদন্ত কমিটি তার প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ৬ আগস্ট ও এখন পর্যন্ত তদন্ত শেষ হয়েছে কিনা তিনি জানতে পারেননি।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকের অভিযোগ, অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হওয়াতেই তদন্তে গড়িমসি করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যখনই কোন অভিযোগ প্রশাসনের কাছে গিয়েছে তখনই প্রশাসন সে অভিযোগ নিয়ে নীরব ছিলেন অথবা তদন্ত কাজে বিলম্ব করে বিষয়টিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করেছেন। প্রশাসন আমাদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যের তদন্ত কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে সাংবাদিকরা ফোন দিলে ১ আগস্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। কিন্তু সেটা ছিল মিথ্যা আশ্বাস। ঘটনার এক মাস শেষ হতে চললেও আমরা তদন্ত কাজ কোন অগ্রগতি দেখতে পাইনি। এই অভিযোগ যদি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে না হয়ে অন্য কারো বিরুদ্ধে হতো তাহলে প্রশাসন এক সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত কাজ শেষ করতেন। কিন্তু ছাত্রলীগ বলেই তদন্ত কাজ নিয়ে প্রশাসনের এই নীরবতা।

প্রশাসনের তদন্ত কাজ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন পাবিপ্রবি প্রেসক্লাবের সদস্যরা। পাবিপ্রবি প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস বলেন, একজন সাংবাদিককে দিনে দুপুরে জন সম্মুখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মারধর করেছেন। সেটা একটা জাতীয় ইস্যু হয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রশাসন নীরব ছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের একবার খোঁজ নেওয়া হয়নি, মেডিকেল ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করেননি। এই ঘটনার পরপরই প্রশাসনের উচিত ছিল দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু এক মাস পার হতে চললেও প্রশাসন নীরব। তদন্ত কাজে কেন অগ্রগতি নেই, কাজের ইশারায় প্রশাসন তদন্ত কাজে বিলম্ব করছেন সেটা আমাদের জানা নাই। আমরা আমাদের সহকর্মীকে মারধরের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই এবং ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার নিরাপত্তা চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা কোন পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি না এবং তদন্ত কাজেও গড়িমসি করা হচ্ছে না। তদন্ত কাজ চলমান আছে। আমরা গত সপ্তাহে অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, এই সপ্তাহেও অনেকের নিয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে আমরা তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা করে সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। একজনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে আরেকজনের নাম চলে আসছে যার কারণে সাক্ষাৎকার শেষ করতে আমাদের বিলম্ব হচ্ছে।

তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দুটি মিটিং ইতোমধ্যে করেছি। সাক্ষাৎকারগুলো নেওয়া শেষ হলে আমরা আরেকটি মিটিং করবো। আমরা আশা করছি এই মাসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে তদন্ত রিপোর্ট দিতে সক্ষম হবো।

এদিকে পাবনা সদর থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেটির তদন্ত কাজে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিক থানায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই জায়গাতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করছে সেজন্য আমরা আপাতত তদন্ত কাজ বন্ধ রেখেছি। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তটি না করেন ও ভোক্তভুগী সাংবাদিক আমাদেরকে তদন্তটি করতে বলেন তাহলে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করবো।