কৃষকের হাতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ, বাজারে কম : পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৮শ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ

দুই সপ্তাহ আগেও পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার হাটগুলোতে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছে ২৩শ থেকে ২৪শ টাকা। সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ২৮শ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার কৃষকের ঘরে এখনো মজুদ রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টন পেঁয়াজ। তবে বাজারে তোলা পেঁয়াজের পরিমাণ কমেছে। আরও দাম বৃদ্ধির আশা করছেন তারা। প্রান্তিক কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে দাম বাড়ায় লাভবান হচ্ছেন মজুদদার বা মধ্যস্বত্ব¡ভোগীরা।

দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে যাওয়ায় সরবরাহে সংকট দেখিয়ে ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে নতুন করে আরও দাম বাড়ছে।

পাবনা শহরের বড় বাজার, আতাইকুলা, একদন্ত, সুজানগর, গোড়–ড়ী, হাজিরহাট, সাঁথিয়া, বেড়ার করমজাসহ বেশ কয়েকটি হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। ইন্ডিয়ার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ জামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, পাবনা জেলায় এ বছর ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৮ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে কৃষকের ঘরে এখনো ৮৯ হাজার ৬৫৫ টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে মূলকাটা পেঁয়াজ লাগানো শুরু হবে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর মূলকাটা পেঁয়াজ লাগানোর আগে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এই সময় জমিতে লাগাতে কন্দ পেঁয়াজ বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। ফলে দাম কিছুটা বেড়ে যায়। আর একশ্রেণির ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে সংকট সৃষ্টি করে দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এবার তাতে বাতাস যোগ করেছে ভারতের শুল্ক আরোপের খবর।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে বাজারেও অস্থিরতা তৈরি হয়। এ ছাড়া পাইকারি মোকামে দেশি পেঁয়াজের সরববাহ কমে গেছে। এসব কারণে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা দাম বেড়েছে।

আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত হাটের খুচরা বিক্রেতা রেজাউল করিম জানান, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কিনতে হয়েছে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। আমাদের বিক্রি করতে হবে এর চেয়ে বেশি দামে। আমাদের তো বেশি লাভ নেই, আমরা যেমন দামে কিনি, তেমনি বিক্রি করি।’

তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষক উপকৃত হয়েছেন বলে মনে করেন সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমাড়ী গ্রামের কৃষক সোনাই আলী। তিনি বলেন, আবাদের খরচ হিসেবে পেঁয়াজের বর্তমান বাজার কৃষকের জন্য সুবিধাজনক। সারা বছর পেঁয়াজের দাম এমন থাকলে কৃষকরা বেশি লাভবান হতো।’ একই উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের আরেক কৃষক শামীম হোসেন বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ায় কৃষকের লাভ নেই। কারণ এখন বেশিরভাগ পেঁয়াজ মজুদদার বা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। দাম বাড়ায় ভালোটাও তাদের বেশি হয়। হাতেগোনা দু’একজন কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ মজুদ থাকে। তারা একটু লাভবান হয়।’

সুজানগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রফিউল ইসলাম জানান, জেলার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে সুজানগর উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘আজকের (মঙ্গলবার) রিপোর্ট অনুযায়ী, সুজানগর উপজেলায় কৃষকের ঘরে ২৫ হাজার ৯৫০ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ আমদানি কিছুটা কমে গেছে। আরও দাম বাড়ার আশায় কৃষকরা পেঁয়াজ বাজারে কম আনছেন।’