পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামিল হোসেনের কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রচারণায় হামলার অভিযোগ উঠেছে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেল হাসান শাহিনের (মোটর সাইকেল) প্রতীকের সমর্থকদেও বিরুদ্ধে। হামলাকারীরা সাদুল্লহপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন খানের ছেলে আরাফাত সিয়াম (২০) ও ভাগ্নে পিয়াল (১৯)। এ ঘটনায় কামিল হোসেনের স্ত্রীসহ তিনজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরের উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের দুবলিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর তৎক্ষনাৎ একটি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেন কামিল সমর্থকরা। এরপর বিকেলে কামিল হোসেন বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের নামে আতাইকুলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে হামলাকারীরা তার কর্মী নন বলে দাবি করেছেন সোহেল হাসান শাহিন (মোটরসাইকেল)।
অভিযোগে বলা হয়েছে, কামিল হোসেনের স্ত্রীসহ ৮/১০জন নারী ও পুরুষ কর্মী সমর্থক কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রচারণায় পাবনা সদর উপজেলার আতাইকুলা থানার দুবলিয়া বাজারে যান। এ সময় একটি দোকানের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রচারণা চালানোর সময় ওই এলাকার ফারাদপুর গ্রামের সিয়াম, পিয়াল ও হৃদয় হোসেনসহ আরো ৪/৫ জন কামিল হোসেনের সমর্থক হারুনুর রশিদকে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এ সময় কামিল হোসেনের স্ত্রী হালিমা খাতুন ঠেকাতে গেলে তার গায়েও হাত তোলে। এ সময় তাদের সাথে থাকা অন্যান্য নারী কর্মীদের গায়েও হাত তোলে হামলাকারীরা।
এছাড়া তাদের হাতে থাকা হ্যান্ডমাইক ভেঙে ফেলে ও লিফলেট ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতিও দেখায় প্রধান অভিযুক্ত সিয়াম। এছাড়া হামলাকারীরা দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করার সময় হুমকি দেয় বলে অভিযোগ কামিল হোসেনের।
স্থানীয় একটি সূত্র জানান, সাদুল্লাহপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন খান। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেল হাসান শাহিনের নির্বাচন করছেন এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। তার ছেলে সিয়ামের নেতৃত্বেই এ হামলা হয়েছে। অভিযুক্তরা সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলেও জানায় সূত্রটি।
মারপিটের শিকার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক ও কামিল হোসেনের (কাপ পিরিচ) সমর্থক বদরুদ্দোজা মানিক বলেন, বাজারে আমরা ভোট চাচ্ছিলাম। আমাদের এক সমর্থক কাপ পিরিচ শব্দটি উচ্চারণ করায় তার ওপর চড়াও হয় সিয়াম ও তার দলবল। একপর্যায়ে অতর্কিতভাবে আমাদের সবাইকে মারধর শুরু করে। নির্বাচন কমিশন প্রতীক দিয়েছে সেই প্রতীকের নামে প্রচারণা চালানোর জন্য এই হামলা চালিয়েছে। বলেছে, এখানে অন্য কোনো প্রতীকের কথা বলা যাবে না। পুরো ঘটনা সেখানকার সিসি ক্যামেরায় পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে প্রার্থী কামিল হোসেন বলেন, পাবনা সদরে এ যাবৎ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় ছিলো। বিভিন্ন ভাবে কিছু কিছু জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রভাব খাটিয়ে বাধা সৃষ্টি করলেও কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সোহেল হাসান শাহিনের (মোটরসাইকেল) কর্মীরা আমার এক কর্মীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করেছে, স্ত্রীসহ নারী কর্মী সমর্থকদের গায়ে হাত তুলেছে ও লাঞ্চিত করেছে। কর্মী হারুন ও আমার স্ত্রীসহ তিনজনকে আহত করা হয়েছে। এগুলো স্পষ্টভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, রিটার্নিং অফিসারের কাছেও অভিযোগ দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে রইচ উদ্দিন খান জানান, তার ছেলের ওপর হামলা করেছিলো কাপ পিরিচের সমর্থকরা। আত্মরক্ষা করতে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তার ছেলে হামলা করেনি।
এদিকে এ অভিযোগ মিথ্যা দাবি চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেল হাসান শাহিনের। তিনি বলেন, রইচ উদ্দিন খান আমার মোটর সাইকেলের নির্বাচন করছেন। কিন্তু তার ওই ছেলে আমার নির্বাচন করছেন না। সে অন্য প্রার্থীর নির্বাচন করছেন। পরাজিত হবার ভয়ে আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। এটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়।
এ ব্যাপারে আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, প্রচারণার সময় উভয়পক্ষের সমর্থকরা মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে বলে জেনেছি। এতে কিছুটা উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
নির্বাচনী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পাবনা অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইন প্রয়োগ করা হবে।
আগামী ২৯ মে পাবনা সদর, ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন প্রথমবারের মত ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে।