ঈশ্বরদীতে সিপিবি নেতা বীর-মুক্তিযোদ্ধা শামসুজ্জামান সেলিমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

পাবনার ঈশ্বরদীর সন্তান বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মন্ডলির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুজ্জামান সেলিমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পূর্ণ হয়েছে।
শনিবার (১৯ আগষ্ট) সকাল ১০ টায় ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুজ্জামান সেলিমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান শেষে বেলা ১১ টায় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত বীর-মুক্তিযোদ্ধা শামসুজ্জামান সেলিমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস এসময় পাবনা জেলা পুলিশের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
পরে বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাযায় অংশ গ্রহন করেন পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাস, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহসম্পাদক মিহির ঘোষ, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নায়েব আলী বিশ্বাস, পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গালিবুর রহমান শরীফ, ঈশ্বরদী পৌর মেয়র ইছাহক আলী মালিথা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আমিনুর রহমান দাদু, গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল, আ.ত.ম. শহিদুজ্জামান নাসিম, উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম মিন্টু, মঞ্জু চৌধুরী, রেজাউল মোস্তফা, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ সাধারন সম্পাদক আব্দুল বাতেন, সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রয়াত-বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুজ্জামান সেলিম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ই আগস্ট) রাত ৯-৪৬ মিনিটে ঢাকা পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতে তার মরদেহ শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে শনিবার সকালে ঈশ্বরদী শহরের শেরশাহ রোডস্থ নিজ বাসভবনে নেওয়া হয়। শুক্রবার (১৮ই আগস্ট) বাদ জুম্মা তার বাসার কাছে রায়ের বাজার মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৪টায় পুরানা পল্টনে দলটির কার্যালয় মুক্তি ভবনে নেওয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীরা। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন বামপন্থী দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সিপিবির গণসংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শামসুজ্জামান সেলিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শনিবার (১৯ আগষ্ট) সকালে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার শেষে তাকে ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তার স্ত্রী সুলতানা জামানের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। শামছুজ্জামান সেলিম ১৯৫০ সালের ২৭ অক্টোবর পাবনার সাধুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঈশ্বরদীতে স্থায়ী হন। সাঁড়া মাড়োয়ারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ঈশ্বরদী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। পরে বুলগেরিয়ার সোফিয়ায় সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা একাডেমি থেকে সমাজবিজ্ঞান ডিপে¬ামা সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে কিশোর বয়সেই গোপন কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হন। পার্টির নির্দেশে তিনি ১৯৬৯ সালের আগস্টে পাকশী পেপার মিলে শ্রমিকের চাকরি নেন এবং ১৯৭৩ সালে সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। পার্টির নির্দেশে ১৯৭৪ সালে পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার হন। দুই বছর পর মুক্তি পান। এর আগে জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানে তাকে মিল থেকে চাকুরী চ্যুত করেন। ৮০’র দশকের শেষে সিপিবি পাবনা জেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিলোপবাদকে মোকাবেলা করে ১৯৯৩ সালে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে দু’দফায় তিনি পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। একইসাথে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় সংগঠন বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।