পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ আশ্রয়ণ প্রকল্প। খুশি মনে গৃহহীনরা উঠেছিল প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের এসব ঘরে। নিচু জমিতে ঘর তৈরি করায় সামান্য বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করছে। ফলে বসবাস অযোগ্য হওয়ায় সেখানে থাকা ১৫ পরিবারের মধ্যে ১০টি অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বাকি পাঁচ পরিবার ভোগান্তি নিয়েও সেখানেই রয়েছেন।
সাঁথিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গৌরীগ্রাম ইউনিয়নে ঘুঘুদহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয় ২০২০-২১ অর্থবছরে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, জমি নির্বাচনে ভুল করায় এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ঘরগুলোর কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। মেঝেতে হাঁটু পানি। স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণের আগে নিচু জায়গা যদি ভরাট করে উঁচু করা হলে এ ভোগান্তি হতো না। ফলে ঘর ছেড়ে কাউকে চলেও যেতে হতো না।
সুবিধাভোগী বাসিন্দা আবুল কাশেম খলিফা বলেন, বৃষ্টির কারণে হাঁটু পর্যন্ত পানি হয়। বর্ষায় দুই থেকে তিন মাস এ ঘরগুলোতে বাস করা সম্ভব না। তাই উপহারের ঘরে তালা দিয়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। কষ্ট করে থাকা পরিবারগুলোর একজন দুলালী খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। সরকার আমাগরে ঘর ও জমি দিছে খুব খুশি অইছি। কিন্তু পানি ঘরের মদ্দি ঢুকে পড়ছে। গ্যাদা পোলাপান নিয়্যে চলাচল করতে কষ্ট অয়। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাই বাধ্য অয়া এখানেই খুব কষ্ট করে আছি। ঠিকমতো রান্না করব্যের পারত্যেছি না। অন্যের বাড়ি থেইক্যে খাবার এনে পোলাপানের খাওয়াই। পানির কারণে মেয়েটা স্কুলে যেতে পারে না। পোলাপান নিয়্যে সব সময় আতঙ্কে থাকি। সাপ পোকামাকড় দেইখ্যে ডর করে। পানির মদ্দি থাকতি থাকতি হাত পায়ে ঘা ও চুলকানি অয়া গেছে।’
আশ্রয়ণের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘরের ভেতর পানি আসায় আমার আড়াই বছরের বাচ্চা তানজিদ দুইবার পানিতে পড়ে যায়, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী লতিফা জানায়, ‘পানির ভেতর থাকতে থাকতে আমার হাত পায়ে ঘা হয়েছে। আমরা এখানে থাকবো না, থাকলে মরে যাবো।’
সমাজকর্মী হাফিজ সরকার বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের ঘর উপহার দেয় সরকার। সেই ঘর নির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উঠেছে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। উপহারের ঘর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপকারভোগী আশ্রয়হীন মানুষরাও। সামান্য বৃষ্টিতেই ভাসছে গৃহহীনদের জন্য দেওয়া আশ্রয়ণের ঘর।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে জরিপ করা হয়েছে। বসবাসকারীদের যাতে অসুবিধা না হয় সে জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রকৌশল দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে বর্ষা মৌসুম শেষে আগামী শুকনো মৌসুমে মাটি ভরাট, ঘরগুলো উঁচু করা, বন্যার পানি প্রবেশের পথ বন্ধের জন্য সীমানা প্রাচীর ও তাদের চলাচলের রাস্তা করে দেওয়া হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে সবরকমের সহযোগিতা করা হবে।
উল্লেখ্য, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের ঘুঘুদহ গ্রামে ১৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার জমি ও ঘর বরাদ্দ পায়। ঘর নির্মাণের পর থেকেই প্রতিবছর বর্ষায় তাদের ঘর পানিতে তলিয়ে যায়। এ বছর বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করায় নানান সমস্যায় ১০টি পরিবার ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। পাঁচটি পরিবার অন্যত্র যাওয়া উপায় না থাকায় কষ্ট উপেক্ষা করে রয়েছেন।