আগাছার দখলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

ক্রমাগত লোকসানের ভার বইতে না পেরে ২০২০ সালে ২ ডিসেম্বর দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে শিল্প মন্ত্রণালয়। বন্ধ ঘোষণা করা ছয়টি চিনিকলের মধ্যে রয়েছে পাবনা সুগার মিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুগার মিলের প্রবেশপথের ঢালায় ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। প্রবেশপথের পাশেই দাঁড় করা বড় সাইনবোর্ডের ভগ্নদশা দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো চিনিকলের সাইনবোর্ড। গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে গার্ড আর প্রশাসনিক কাজ চালু রাখতে এমডিসহ কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কারও দেখা মেলেনি। চিনিকলের ভেতরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে আখ পরিবহনের দুই শতাধিক ট্রলি। ট্রলিগুলো জঙ্গল আর লতাপাতায় ঢাকা পড়েছে। মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও বছরের পর বছর পড়ে থাকায় মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আখ মাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনিকলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মাড়াই যন্ত্রের ডোঙ্গা, নাইফ, ক্রাসার, বয়লার হাউস, রুলার, ড্রায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। একসময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা মিলটি এখন নীরব ও জনশূন্যে পরিণত হয়েছে।

সুগার মিল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া এলাকায় ১৯৯২ সালে ২৭ ডিসেম্বর পাবনা সুগার মিলটি ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়। মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়।

স্থানীয় দাশুড়িয়া এলাকার আখচাষি মো. জাকির হোসেন বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলেছিল আমাদের উৎপাদিত সব আখ নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ও নাটোর সুগার মিলে বিক্রি করতে পারবেন, কিন্তু পরে তারা আর কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি। দীর্ঘদিন এই সুগার মিল বন্ধ থাকার কারণে আখের পরিবর্তে এখন অন্য ফসল আবাদ করছি।

মুলাডুলি এলাকার আখচাষি আলম হোসেন বলেন, আমার ২৫ বিঘা জমিতে আখ উৎপাদন করতাম শুধু পাবনা সুগার মিলে সরবরাহের জন্য। চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ার প্রথম বছরে বেশ লোকসান হয়েছে আমার। চিনিকল বন্ধ হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ি। এখন অন্য ফসল আবাদ করে জীবন-জীবিকা চলছে।

পাবনা জেলা আখচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী ডিলু বলেন, পাবনা সুগার মিলে জেলার ৯ উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষক আখ সরবরাহ করত। বন্ধ ঘোষণার পর কৃষকরা বেকায়দায় পড়ে আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছে। আখচাষি, চিনিকলে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আখচাষি ফেডারেশন নানামুখী আন্দোলন করলেও চিনিকলটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ঈশ্বরদীতে আখ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ও চিনির চাহিদা মেটাতে এই সুগার মিল পুনরায় চালু করা দরকার।

পাবনা সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের আগের বছর পাবনা সুগার মিলে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়, যা বিগত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ। এ চিনিকল চলমান অবস্থায় আখ চাষে জেলার অনেক কৃষক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে গিয়েছিলেন।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়ার চিনিকল বন্ধের তিন বছরেও চালু হয়নি। এতে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মিলের মূল্যবান যন্ত্রপাতিসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।