পাবনার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে তৈরি, বিক্রয় ও বিপণন হচ্ছে মিহি ও হালকা চায়না দুয়ারী জাল। বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাছ ধরার উপকরণ প্রস্তুত কারক ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান করার নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নির্বিঘ্নে ক্ষতিকর চায়না দুয়ারী জাল তৈরি করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এতে ছোট পোনা মাছ ও জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশংকা করছেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা গ্রামের কালিপদ হলদারের ছেলে সুশান্ত হলদার ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য চাটমোহরের ১১ নং বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিথী ট্রেডার্সের নামে ২০৬ নং ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে চায়না দুয়ারী জালের এ কারখানা পরিচালনা করে আসছেন।
শুধু কালিপদ হলদারই নন এমন কাজ হচ্ছে জেলার প্রায় শতাধিক স্থানে। বিশেষ করে পাবনা শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে, সুজানগররের কাশিনাথপুরের আশেপাশে, বেড়া উপজেলা সদরে, ফরিদপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
বোঁথর গ্রামের একটি বাড়ির পাশে অবস্থিত চায়না দুয়ারী জালের কারখানাটি পরিদর্শনকালে দেখা যায় কারখানাটির চারপাশ সীমানা দিয়ে ঘেরা। লোহার গেটের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পরে চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এ জাল তৈরির বিভিন্ন উপকরণ। জালের মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্য তৈরি করে রাখা চারকোণাকৃতির লোহার চিকন রডের ফ্রেম। রড ঢেকে দেওয়ার জন্য প্লাস্টিকের চিকন পাইপ। একটি কক্ষে স্তুপ করে রাখা রয়েছে বিপুল পরিমাণ নতুন জাল। পাশের শেডে ফ্রেমে তৈরি হচ্ছে চায়না দুয়ারী জাল।
এলাকাবাসী জানান, বেশ কিছু দিন ধরে এ বাড়িতে তৈরি হচ্ছে চায়না দুয়ারী জাল। বাইরের কাউকে এ বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। নারী-পুরুষ কারিগররা আসে-যায়। এ বাড়িতে কি হচ্ছে তা এলাকার কেউ কেউ জানলেও অনেকেই জানেন না।
কর্মচারীরা জানান, অল্প কিছু দিন ধরে এখানে চায়না দুয়ারী জাল তৈরি হচ্ছে। সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে কারিগররা আসেন জাল তৈরি করতে। তবে তাদের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে বলেও জানান তারা।
কারখানাটির মালিক সুশান্ত হলদারের এক নিকটাত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অল্প কিছুদিন হলো চালু করেছি। প্রশাসন জানে না। গোপনে চালানো হচ্ছে, আপনারা যদি নিষেধ করেন, তাহলে বন্ধ করে দেওয়া লাগবে।
জলজ জীববৈচিত্রের জন্য চায়না দুয়ারী জাল বা মাছ ধরার এ ফাঁদ কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর। এ জাল সূক্ষ্মভাবে মাছ আটকে রাখতে সক্ষম। জালের বুননে এক গিঁট থেকে আরেক গিঁটের দূরত্ব খুব কম হওয়ায় মাছ বা অন্য কোন ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী একবার এ জালের মধ্যে প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। অন্য জালের চেয়ে কম পরিশ্রমে চায়না দুয়ারী জালে অধিক পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। ফলে এ এলাকার জেলেদের কাছে কদর বেড়েছে চায়না দুয়ারী জালের। জেলেরা এখন মাছ ধরতে কারেন্ট জালের পরিবর্তে ঝুঁকছেন চায়না দুয়ারী জালের দিকে। উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন, ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও সুজানগর, আটঘরিয়া, চাটমোহরের বিল, নদীগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার জাল পেতে মা ও পোনা মাছ নিধন করছেন অসাধু মৎস্যজীবীরা। ফলে ক্রমশই বিলুপ্ত হচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ। এ জালের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে মাছের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন জানান, সিথী ট্রেডার্সের নামে মাছ ধরার উপকরণ প্রস্তুতকারক ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ট্রেড লাইসেন্সটি আমার দেওয়া। তবে, মালিক সুশান্ত হালদার যে এই ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চায়না দুয়ারী জাল তৈরি করছেন তা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হালিমকে অবহিত করলে তিনি বলেন, বিষয়টি মূলত মৎস্য কর্মকর্তা দেখভালো করার কথা, তবুও আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, চায়না দুয়ারী জাল তৈরি, ব্যবহার, বিপণন, পরিবহন নিষিদ্ধ। পাবনায় এ ধরনের জাল প্রস্তুত হচ্ছে বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদি আমাদের অফিসের কোন অফিসের লোকজন এ অপকর্মেও সাথে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।