অনিয়মের অভিযোগ করায় তদন্তকালে অভিযোগকারীকে মারধরের অভিযোগ মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিনিধি:
সীমাহীন দুর্নীতি, জাল কমিটি ও ভূয়া রেজুলেশনে নিয়োগ সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করায় তদন্তের সময় অভিযোগকারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পাবনার বেড়া উপজেলার পাচুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাখাওয়াত হোসেন বেলালী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে পাচুরিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় ভুক্তভোগী ওইদিনই বেড়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী পার্শ্ববর্তী উপজেলা সাঁথিয়ার পুন্ডুরিয়া গ্রামের আ. সামাদ ব্যাপারীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪২)।
স্থানীয় ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভূয়া রেজুলেশনে জাল কমিটি করে নিয়োগ বাণিজ্য সহ মাদ্রাসা সুপারের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন শফিকুল ইসলাম। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ওপর এবিষয় তদন্তের দ্বায়ভার দেন। পরবর্তীতে গত ২৭ নভেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আ. কাদের বিশ্বাস ২ ডিসেম্বর তদন্তকাজে মাদ্রাসায় আসবেন এবং সেখানে অভিযোগকারী শফিকুল সহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকতে একটি চিঠিতে অনুরোধ জানানা। এরপর তদন্তের দিন (২ ডিসেম্বর) সকালে অভিযোগকারী শফিকুল সহ অন্যান্যরা মাদ্রাসায় আসলে ১১ টার দিকে মাদ্রাসা সুপার বেলালী তার লোকজন দিয়ে শফিকুলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। গালিগালাজ করতে নিষেধ করায় এসময় তাকে মারধর করা হয়। এরপর পরিস্থিতি বেগতিক দেখে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্তকাজ সাময়িক স্থগিত করে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে আনেন।
ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমাকে মার খেতে হয়েছে। শিক্ষা অফিসারের চিঠিতে সেখানে যেতেই মাদ্রাসা সুপার সহ ৩/৪ জন আমাকে মারধর শুরু করে। পূর্বে জেলা ওলামালীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করায় ৫ আগস্টের আগে তিনি আ.লীগ নেতাদের প্রভাব ও ভয় দেখিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সবকিছু করেছেন। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারেনি। এখন উনি ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে একই কাজ করতে চাচ্ছেন। বাহিনী দিয়ে আমাকে মারধর করেছেন। এসময় শিক্ষা অফিসার সহ অন্যান্য অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমি এর বিচার চাই।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আ. কাদের বিশ্বাস বলেন, তদন্তকাজে সহায়তার জন্য অভিযোগকারী শফিকুল সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিলাম। শিক্ষক সহ কয়েকজন আমরা মাদ্রাসের একটি কক্ষে তদন্তকাজ করছিলাম। শফিকুল বাইরে ছিলেন। হঠাৎ দৌড়ে এসে বললেন তাকে মারধর করা হচ্ছে। বাইরে বের হয়ে পরিবেশ সুবিধাজনক না মনে হওয়ায় তদন্তকাজ সেদিনের মত স্থগিত করে তাকে নিয়ে মাদ্রাসা ত্যাগ করি। এধরণের কোনো ঝামেলা হতে পারে সেটি জানতাম না, এরকম কোনো আশঙ্কার কথাও কেই জানায়নি। যেহেতু মাদ্রাসায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, সেহেতু সংশ্লিষ্টদের অফিসে ডেকে তদন্তকাজ সম্পন্ন করা হবে।
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসা সুপার বেলালী বলেন, আমি শিক্ষা অফিসার স্যারের সাথে ছিলাম। আমি এসবের কিছুই জানি না। শফিকুল দৌড়ে এসে যখন বলল তখন জানতে পারি। আমি এর সাথে সম্পৃক্ত নই। তবে পরে জেনেছি, যে শিক্ষিকা নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তাদের দুএকজন আত্মীয় ওখানে ছিলো, তারা এসব নিয়ে মিথ্যা প্রশ্ন না তুলতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ নিয়ে দু’চারটা কথা কাটাকাটি হয়েছে। মারধরের মত কিছু ঘটেনি।
এব্যাপারে বেড়া মডেল থানার ওসি ওলিউর রহমান বলেন, ছুটিতে থাকায় অভিযোগপত্রটি দেখা হয়নি। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি মাদ্রাসার এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক পদে মিনা খাতুন নামে এক নারী শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেয় মাদ্রাসা সুপার শাখাওয়াত হোসেন বিলালী। মাদ্রাসা নিয়োগ বিধি অনুযায়ী অনুমোদিত নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি ব্যতীত নিয়োগ প্রদানে বিধিনিষেধ থাকায় এডহক কমিটি চলমান থাকলেও ভূয়া নিয়মিত কমিটি দেখিয়ে এ নিয়োগ সম্পন্ন করেন তিনি। তথ্য গোপন করে এ শিক্ষিকার বেতন ভাতা উত্তোলনের ব্যবস্থাও করেন। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পছন্দের লোককে নিয়োগ দিতে কাউকে না জানিয়েই তিনি এমন অনিয়ম করেছেন। জেলা শিক্ষা অফিসে আরেকটি অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি বেড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজারকে দিয়ে তদন্ত করায় শিক্ষা অফিস। এতে তার নিয়োগ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে জানিয়ে গত ১৪ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। টাকায় নিয়োগের ঘটনা এটিই শেষ নয়। সম্প্রতি স্থানীয় ইউপি সদস্য মান্নান মেম্বারের ছোটভাইকে চাকরি দেবার নামে তার থেকে মাদ্রাসা সুপার হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের অর্থ। চাকুরী না দিয়ে পতনের আগে আ.লীগের প্রভাব এবং সবশেষ জামায়াতে ইসলামীর নেতা পরিচয়ের প্রভাব দেখিয়ে তিনি এ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ মান্নান মেম্বারের।
এছাড়া কয়েক বছর আগে তৎকালীন ইউএনও এর স্বাক্ষর জাল করে গোপনে শিক্ষকদের টিউশন ফি এর টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন মাদ্রাসার এ সুপার। এ নিয়ে মামলা হয়েছিলো, তদন্তও হয়েছিলো। এঘটনাসহ নানা কারণে উনি বরখাস্তও হন। পরে শিক্ষকদের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে শিক্ষকরা তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। এরপরও সুপার সেই টাকা আত্মাসাৎ করেন। এছাড়া এর আগে তার গ্রামে নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের জেরে বিচার সালিসে তাকে জরিমানা করা হয়েছিলো বলেও অভিযোগ শিক্ষক ও স্থানীয়দের।